ফিরে দেখা ২০১৯: কূটনীতিতে রয়ে গেল দ্বৈত চ্যালেঞ্জ

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের কূটনীতিতে রোহিঙ্গা সংকট এবং ভারতে এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে উদ্বেগ ছিল। নতুন বছরেও সেই উদ্বেগ শেষ হয়নি। ২০২০ সালেও রয়ে গেছে এ দ্বৈত চ্যালেঞ্জ। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিদায়ী ২০১৯ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালত আইসিজেতে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট দেশ গাম্বিয়া। এতে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। তবে এ পদক্ষেপের ফলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং বিদায়ী বছরে ভারতের এনআরসি এবং শেষের দিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন করায় বাংলাদেশে নানা প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে নতুন বছরে বাংলাদেশের কূটনীতিতেও এ দু’ইস্যু মোকাবেলা করা চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে বলে ধারণা করা যায়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছে। তার ফলে ৩ মাসেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে সাত লাখ। তার সঙ্গে আগে থেকেই বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের যোগ করলে দেখা যায় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে বাস করছে। এ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ এ বিষয়টিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে নিয়ে গেছে। আঞ্চলিক হিসেবে চীনের সহায়তাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই ফল আসছে না। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে। মিয়ানমারনেত্রী নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি হেগের আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। মামলায় গাম্বিয়াকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে জাতিসংঘের ফ্যাক্টস ফাউন্ডিং কমিটি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের তথ্যপ্রমাণ নিয়ে গেছে। গাম্বিয়া চায়, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের মূল বিষয়গুলো নিষ্পত্তির পূর্বে অন্তর্বর্তী আদেশ। জানুয়ারি নাগাদ এ ব্যাপারে আইসিজে কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ দেয় কিনা জানা যাবে। আইসিজে জাতিসংঘের মূল যে ছয়টি অঙ্গ তার অন্যতম। যার সদর দফতর হেগে অবস্থিত। বাকি পাঁচটির সদর দফতর নিউইয়র্কে অবস্থিত।
আইসিজে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকে। কোনো ব্যক্তির অপরাধের বিচার করে না। ব্যক্তির অপরাধ বিচারে জাতিসংঘের একটি আদালত আছে তার নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। নতুন বছরে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আইসিসিতে মামলার উদ্যোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আসামে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) করেছে। ভারতে আদালতের আদেশে এনআরসি করা হলেও বিজেপি মূলত মুসলিম বিরোধীদের ভোটের লক্ষ্যে এনআরসি করেছিল। কিন্তু ১৯ লাখ লোক কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তারা এনআরসি থেকে বাদ পড়ে গেলেন। তাদের মধ্যে ১১ লাখই হিন্দু। এনআরসি বিজেপির রাজনীতির জন্যে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিজেপি তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতের পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে পাস করেছে। তারপর রাষ্ট্রপতি সই করায় বিলটি আইনে পরিণত হয়।
আইনে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনো হিন্দু ভারতে গেলে তাকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, এ আইন বৈষম্যমূলক। এ নিয়ে গোটা ভারতে তুলকালাম হলেও বিজেপি এ আইন বাতিল করার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন এ পরিস্থিতি বাংলাদেশ কিভাবে মোকাবেলা করবে সেটি বিরাট এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিদায়ী বছরে পূর্ববর্তী বছরের ধারাবাহিকতায় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে। ফলে শেখ হাসিনার সরকার তার আগের আমলে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন ঘিরে পশ্চিমা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও এবার বেশ সহানুভূতি পাচ্ছে। বিশেষ করে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়ায় পশ্চিমাদের খুব বেশি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ইসলামী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার হলেও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ থেকে নারী কর্মীরা ফিরে এসেছেন। তারা নির্যাতনের অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে সরকার খুব বেশি কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি। নতুন বছরে এ ব্যাপারে কী ধরনের উদ্যোগ নেয় সরকার তার প্রতি সবার দৃষ্টি থাকবে।