ভারতে বিক্ষোভ: ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন শিল্প, ৭ দেশের ভ্রমণ সতর্কতা জারি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এর বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশটির পর্যটন শিল্প। তাজমহলসহ দেশটির শীর্ষ পর্যটন স্থানগুলোয় ব্যাপক হারে কমেছে পর্যটকদের সংখ্যা। ভারতে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইসরাইল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও তাইওয়ান। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরে পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, এখন পর্যন্ত ভারতজুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। বিক্ষোভকারীদের দমাতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। একাধিক অঞ্চলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা। আতঙ্ক বিরাজ করছে বহু রাজ্যে।
এ পরিস্থিতিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের পর্যটন শিল্প।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে আনুমানিক ২ লাখ দেশি ও বিদেশি পর্যটক তাজমহলে তাদের সফর বাতিল বা স্থগিত করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর একটি উত্তর প্রদেশের আগ্রায় অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি। তাজমহলের নিকটে স্থাপিত একটি বিশেষ পর্যটক পুলিশ স্টেশনের দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ ইন্সপেক্টর দিনেশ কুমার। সেখানে কতজন পর্যটককে প্রবেশাধিকার দেয়া হয় তার তথ্য থাকে কুমারের কাছে। তিনি জানান, গত ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি মাসে পর্যটকের সংখ্যা ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ভারতীয় ও বিদেশি পর্যটকরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন দিয়ে নিরাপত্তা অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইছে। আমরা তাদের সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত করলেও অনেকেই তাদের সফর বাতিল করে দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, চলমান বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ও আগ্রাসনের ঘটনা ঘটেছে উত্তর প্রদেশে। নয়া দিল্লিতে সফরকারী ইউরোপীয় পর্যটকদের একটি দল রয়টার্সকে জানিয়েছে, সেখানে তাদের ২০ দিন থাকার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন তারা তাদের সফর ছোটো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির এক সদস্য লন্ডনের বাসিন্দা ডেভ মিলিকিন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। তিনি জানান, আমাদের দলের সবাই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, ধীরে-সুস্থে ভ্রমণ করা। তবে পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন খবর পড়ে আমাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পরিকল্পিত সময়ের আগেই আমরা চলে যাবো।
রয়টার্স জানিয়েছে, তাজমহলে প্রতি বছর গড়ে ৬৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন। কেবল তাজমহলে তাদের প্রবেশ ফি থেকে ভারতের আয় হয় প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়া বিদেশি পর্যটকদের জন্য তাজমহল পরিদর্শনের প্রবেশ ফি প্রায় ১৫ ডলার। সাম্প্রতিক অস্থির পরিবেশের কারণে এই আয় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। তাজমহল ঘিরে স্থাপিত বিলাসবহুল হোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোও ক্ষতির মুখ দেখছে। পর্যটকদের ভরা মৌসুম হলেও ব্যবসা একেবারেই নিম্নমুখী। ভারতের অর্থনীতির জন্য এটি বড় দুঃসংবাদ। সম্প্রতি বিগত ৬ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায়ও ভারতের পর্যটন শিল্প ক্ষতির শিকার হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ২৫০টির বেশি ভ্রমণ অপারেটর, হোটেল ও গাইড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আগ্রা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট সন্দ্বীপ আরোরা বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আগ্রার ভ্রমণ ও পর্যটন ৫০-৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভারতের অন্যতম আরেকটি পর্যটন স্থান হচ্ছে আসাম। রাজ্যটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এক শিংওয়ালা গ-ারের আবাসস্থল আসাম ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের প্রধান জয়ন্ত মাল্লা বড়–য়া জানান, সাধারণত ডিসেম্বরে গড়ে ৫ লাখ পর্যটক রাজ্যটিতে ভ্রমণ করেন। কিন্তু এইবার বিক্ষোভ ও বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ সতর্কতার কারণে সে সংখ্যা অন্তত ৯০ শতাংশ কমে গেছে।