দূষণমুক্ত ঢাকা গড়বেন তাবিথ, ১০০ বছরের ‘মাস্টার প্ল্যান’ ইশরাকের

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হলে দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য ঢাকা নগরী গড়ে তুলতে চান বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)-এর মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকাকে নিয়ে ১০০ বছরের ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করবেন দলটির মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন। এই দুই মেয়র প্রার্থী নিজ-নিজ নির্বাচনি ইশতেহারে ঢাকাকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন বলেও তারা জানিয়েছেন। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচনি প্রচারণায় সরকারের আর্থিক দুর্নীতি, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভোটাধিকার ইস্যুটি মেয়রপ্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণায় জায়গা পাবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিএনপির পার্লামেন্টারি কমিটি মেয়রপ্রার্থী হিসেবে তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করে। দলের ভেতরে তরুণ দুই নেতাকে নিয়ে কিছু নেতিবাচক মনোভাব থাকলেও দলের হাইকমান্ডের আগ্রহেই মূলত তারা মনোনীত হয়েছেন। নির্বাচনি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘পৃথিবীর বাসযোগ্য শহরের তালিকার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, ঢাকা নিম্নতালিকায় চলে এসেছে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথম কাজেই হবেই রাজধানীকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা। এজন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ, নিরাপদ খোলা পরিবেশ, জলাবদ্ধতা মুক্ত করবো।’ মেয়র নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করাকে প্রাথমিক কাজ বলে উল্লেখ করে তাবিথ বলেন, ‘তবে শহর পরিকল্পনায় কোনও বিষয় এককভাবে অগ্রাধিকার পেতে পারে না। যেমন ডেঙ্গু মোকাবিলায় অগ্রাধিকার দিতে বায়ুদূষণ বেড়ে যাবে। আবার বায়ুদূষণ মোকাবিলা করতে গেলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে না। এসব সবকিছুরই সমন্বয় করে কাজ করবো।’
ঢাকা সিটির সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে ‘অদম্য ঢাকা প্ল্যাটফর্ম’-এর মাধ্যমে ১২ প্রকল্পে সীমিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তাবিথ বলেন, ‘এরমধ্যে রয়েছে—বর্জ্য ব্যবস্থা, নালা পয়ঃনিষ্কাশন করা, জলাবদ্ধতা দূর করা, মশানিধন করা, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা, সবার জন্য আবাসন ব্যবস্থা করা। আমি মনে করি, এই ১২টিকে সমন্বিতভাবেই গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। যেমন, বর্জ্যের সঙ্গে জলাবদ্ধতা সম্পর্কিত। আবার জলাবদ্ধতা হলে মশার জন্ম হয়। মশা থেকে ডেঙ্গু রোগের সৃষ্টি হয়।’ এদিকে, পৃথিবীর অপরিকল্পিত নগরী ও বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় গত কয়েকবছরে ঢাকা ১ থেকে ৫ মধ্যের থাকে বলে অভিযোগ করেন ডিএসসিসির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘মেয়র হলে প্রথমে ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে চাই। ঢাকার প্রধান সমস্যা হচ্ছে—যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণ। যানজটের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার কারণে বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। এগুলো প্রথমে সমাধান করবো।’
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নির্বাচিত হলে বায়ুদূষণ, নিরাপদ শহর, যানজট নিরসন করা, মশকনিধন অধিদফতর কার্যক্রর করার পাশাপাশি নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করবো।’ ঢাকায় মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্টের আওতায় আনার কথা জানিয়ে ইশকার বলেন, ‘ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা হলে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার মধ্যে এক ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি হয়। আমি এই জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষাকালের জন্য বসে থাকবো না। বছরের শুরুতেই এই নিয়ে কাজ করবো। ফায়ার সার্ভিস এখন সিটি করপোরেশনের আওতায় নেই। আমি মেয়র হওয়ার পর এটিকে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করবো। কারণ ঢাকা সিটিতে কোথাও আগুন লাগলে মানুষের আশা থাকে যে, মেয়র কিছু করবেন।’
ঢাকা নিয়ে ১০০ বছরের ‘মাস্টার প্ল্যান’ করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে ইশরাক বলেন, ‘এই পরিকল্পনা করা হবে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, বিদেশি বিশেজ্ঞষদের সমন্বয়ে।’ ইশরাক হোসেন বলেন, ‘রাজধানীতে নাগরিকদের ২৪ ঘণ্টা সুবিধার জন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে নাগরিকরা সবকিছু পাবে।’ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রচারণায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘দেশে যে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে, তার অবসান করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমরা জনগণের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরবো।’
এদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। তবে সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের কোনও আগ্রহ নেই।  ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতারা বলছেন, সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি তাদের। ফলে, এই নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনও আগ্রহও নেই। বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষেও কাজ করা বা বিরোধিতা করা, কোনোটিই করবেন না তারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আমার কোনও আলাপ হয়নি। এই সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তা প্রমাণিত হয়ে গেছে।’ ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো।’ জোটভুক্ত শরিক দলগুলো নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।