মা-মণি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু : লাখ টাকা জরিমানা করলেন চেয়ারম্যান, ‘থানার সহযোগিতায় মিটমাট’

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় মা-মণি কিনিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা লাখ টাকায় মীমাংসা হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মা-মনি কিনিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। তবে নিহতের পরিবার কোনো টাকা পেয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি।
সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে উপজেলার বাগআঁচড়া বাজারের আঁখি টাওয়ারে মা-মণি কিনিকে সেলিনা নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। সেলিনা শার্শার ইছাপুর গ্রামের রওশন আলীর স্ত্রী। স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ উঠেছে বাগআঁচড়ার মা-মনি কিনিক এখন সন্ত্রাসী গুন্ডাবাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ চলছে। আর এ গুন্ডা, বাহিনী পরিচালনা করছে ওই কিনিকের মালিক পক্ষ। এ কিনিকে চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। আর এই অপচিকিৎসা ও খামখেয়ালিপনার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে তিন সন্তানের জননী সেলিনা খাতুনকে। রবিবার কিনিকে এ ব্যাপারে সরেজমিনে জানতে গেলে প্রথমে কাউকে না পেলেও ঘন্টাখানেক পর স্থানীয় একদল যুবক এসে সাংবাদিকদের নিউজ না করার জন্য হুমকি ধামকি দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেলিনার স্বামী রওশন আলী জানান, তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য গত মঙ্গলবার মা -মনি নামে কিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতে আবুল বাশার নামে একজন ডাক্তার তার স্ত্রীর সিজার করে চলে যান। সেই থেকে এ হাসপাতালে কোনো ডাক্তার না থাকায় তার স্ত্রী শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শনিবার রাত ৯ টার দিকে। রওশন আলী আরও জানান, বার বার ওই কিনিকের একজন কর্মচারীকে ডাক্তার ডাকতে বলা হয়েছিল। এরপর হাসপাতালের নার্সকেও ডেকে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় বাগআঁচড়া ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, মা-মণি কিনিকে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমি থেকে ওই শিশুর জন্য খরচ খরচার ব্যবস্থা করে দিয়ে মীমাংসা করে দিয়েছি। অপচিকিৎসায় মৃত্যু হওয়ায় আইনের আওতায় না এনে আপনারা মীমাংসা করলেন কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক্সিডেন্টে হয়ে গেছে এখন উপায় আরকি থানার সহযোগিতা নিয়ে এটা মিটমাট করা হয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় নেতাদের টাকার অংক দিয়ে মিটমাট করা হয়েছে। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে আবারও ওই কিনিকে তথ্যের জন্য গিয়ে মালিক পক্ষকে ফোন দিলে প্রথমে ফোন রিসিভ করে বলে আসছি। এরপর ঘণ্টা পার হলেও কেউ আসেননি এবং ফোনও রিসিভ করেন নাই। বার বার ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করে অসীম নামে একজন সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে ৭/৮ জনের একটি বাহিনী পাঠান। তারা হুমকির সাথে বলে কোনো নিউজ হবে না। এটা থানা ও চেয়ারম্যান মীমাংসা করেছে। ডাক্তার আবুল বাশার এর মোবাইল নাম্বার চাইলে সন্ত্রাসী অসীম বলেন তাকে কেন ফোন দিয়ে ডিসটার্ব করবেন। আপনারা একজন ডাক্তারকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতে পারবেন না। আপনারা এই হাসপাতাল থেকে কোনো তথ্য পাবেন না। সূত্রে আরও জানা গেছে, শার্শার বাগআঁচড়া বাজারের আঁখি টাওয়ারের দোতলায় হাসপাতালটি অবস্থিত। এখানে নেই কোনো ডাক্তার, নেই কোনো নার্স। রোগী আসলে রিসিপশনিস্ট মামুন নামে ব্লাড প্রেশার মেপে একটি ছোট প্রেসক্রিপশন লিখে ২০০ টাকা নেয়। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলে এসব ছোটখাট বিষয় আমরা দেখতে পারি। এ ব্যাপারে বাগআঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুখদেবকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। শার্শা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, এ ধরনের একটি ঘটনা বাগঅ্াঁচড়ায় ঘটেছে তবে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তিনি বলেন এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।