কিছুটা সুষ্ঠু হলেও ইভিএমে জালিয়াতির শঙ্কা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ আসন্ন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ফের উত্তপ্ত রাজনীতির হাওয়া। সর্বত্রই আলোচনা এ নির্বাচন ঘিরে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ চমকও এনেছে এবার। রাজনৈতিক পরিবারের হলেও অপেক্ষাকৃত তরুণ ও শিক্ষিতদের প্রার্থী করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় এ নির্বাচনে। ইতোমধ্যে মেয়র পদে নির্বাচনে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে বাদ দিয়ে সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস কে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দল থেকে। উত্তরের জন্য মনোনীত করা হয়েছে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামকে।
বিএনপির পক্ষে উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের জন্য ইশরাক হোসেন কে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাবিথ আউয়াল এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ঢাকার প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। এবারই প্রথম তিনি কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনী পরিবেশ-পরিস্থিতি, প্রার্থী, প্রত্যাশা ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থান নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী লেখক, গবেষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের কাছে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাংলাদেশে আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই, তা হলফ করেই বলা যেতে পারে। বিশেষ করে গত এক দশকের নির্বাচন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে যে কেউ গণতন্ত্র নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলতে পারেন। মূলত নির্বাচন ঘিরেই এখন রাজনীতির যত হতাশা।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে হাত করেই ক্ষমতা পোক্ত করতে চাইছে, যে ক্ষমতার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের নামে যে প্রহসন চলছে, তারই হয়তো আরেকটি নাটক আমরা ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনে দেখতে পাব।
‘তবে ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন আলোচনাও সামনে আসতে পারে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার বদলের কোনো সুযোগ নেই। সরকার গত দুটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জারি করেছে, তা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফলে কিছুই যায়-আসে না। সরকার পতনের কারণ হবে না বলে এ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নাও হতে পারে। সিটি নির্বাচন কিছুটা সুষ্ঠু হতে পারে, এটি তার একটি এবং আশার কথাও বটে।’ ‘আরেকটি বিষয় হলো, গত এক দশকে পরিকল্পিতভাবে মানুষকে নির্বাচনবিমুখ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই আর নির্বাচন কাঠামোর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এমন ধারাবাহিকতা থাকলে গোটা নির্বাচন কাঠামোই ভেঙে পড়বে। সরকার শুভবুদ্ধির উপলব্ধি থেকে হয়তো এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার সুযোগ দেবে। অন্তত আগের বদনাম কিছুটা দূর করতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নাও করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাজনীতির চলমান পরিস্থিতিতে জনগণের আসলে কিছুই করার নেই। মানুষ নির্বাচন ব্যবস্থায় কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। ভোট দিতে পারবে কি পারবে না অথবা কাকে ভোট দিতে হবে, এ ভাবনাও করতে পারছে না জনগণ। অথচ সংকট নিরসনে সাধারণের অংশগ্রহণ-ই জরুরি।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট, তা নানাভাবেই প্রমাণিত। আগের কমিশনও তা-ই ছিল। নির্বাচন কমিশন মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
একাধিক জালিয়াতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ কমিশন অতিপাপ করে ফেলেছে। কমিশনের পাপ ঢাকা সিটি নির্বাচনে মোচন হবে না। এ নির্বাচন কমিশনকে কেউ আর বিশ্বাস করে না। কারণ তারা বহু অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।’ ‘সংবিধানের ৭৩ থেকে ৭৯ ধারা অনুযায়ী, কমিশন গুরুতর অপরাধ করেছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের বিচার হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য থেকে দেখেছি, অনেক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। অনেক সেন্টারে বৈধ ভোটের চেয়ে অবৈধ ভোট বেশি পড়েছে। চট্টগ্রামে গণসংহতির এক প্রার্থী একটি ভোটও পায়নি। এগুলোর মাধ্যমে জালিয়াতির সীমা চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। এছাড়া কমিশন যে তথ্য দিয়েছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। ‘পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নই। নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাইছে। অথচ গত জাতীয় নির্বাচনে কয়েকটি সেন্টারে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন নানা অসঙ্গতির জন্ম দিয়েছে। বাইরের দেশের অভিজ্ঞতার কথা বলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলেও, প্রয়োগ করেছে নিজেদের সিদ্ধান্ত। ইভিএমে ভোট পড়েছে ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২৯৪টি আসনে ভোট পড়েছে ৮০ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর চেয়ে বড় জালিয়াতির প্রমাণ আর কী হতে পারে!’ ঢাকার দুই সিটির তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর, বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি, ভোট গ্রহণের দিন ৩০ জানুয়ারি।