দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সামনে কি?

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হয়েছিল শুদ্ধি অভিযান। অভিযানে অনেক রাঘববোয়ালের সাম্রাজ্য তছনছ হয়ে গেছে। কেউ বিদেশে পালিয়েছেন। অভিযান মূলত প্রথমে ক্যাসিনো কারবারীদের বিরুদ্ধে শুরু হলেও তা শেষ পর্যন্ত ঠেকে প্রভাবশালী ঠিকাদার, কাউন্সিলর, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে। তবে শুদ্ধি অভিযান নিয়ে বর্তমানে ধোঁয়াসা তৈরি হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, অভিযান কী আর চলবে? সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার গোপীবাগ থেকে চাঁদাবাজী ও সস্ত্রাসী লালনের অভিযোগে কাউন্সিলর মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে অনেকটা থমকে গেছে অভিযান। তবে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী জানিয়ে, দুর্নীতি, মাদক ব্যবসায়ী ও ক্যাসিনো কান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। পাশপাশি দুদকও সক্রিয় হবে। শুরুতে অভিযান ঢাকা কেন্দ্রীক হয়েছিল। এবার তা ঢাকার বাইরে মোটাদাগে শুদ্ধি অভিযানের পরিকল্পনা আছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুদ্ধি অভিযানের প্রথম সাড়িতে থাকা র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস্‌) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার পিএসসি জানান, ‘আমরা শুধু নির্দিষ্ট বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছি না। অস্ত্র, মাদক, জঙ্গি, সস্ত্রাসীসসহ বিভিন্ন অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এইতো কিছুদিন হলো হলো আমরা ১২ লাখ ইয়াবা জব্দ করেছি। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে দেখা যাবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো কান্ডে প্রথম গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযানের ডালপালা বিস্তার হতে শুরু করে। জনমনে বিশ্বাস তৈরি হয় যে, দুর্নীতি করলে ছাড় পাওয়া যাবে না। ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু থেকে নিয়মিত চললেও মাঝে এসেছে ধীরগতি। সর্বশেষ ৩১শে অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কোন দুর্নীতিবাজ বা ক্যাসিনো কান্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে র‌্যাব ও পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলেই পুরোদমে আবার শুরু হবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান। র‌্যাব ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে মোট ৫০ টি ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তার মধ্যে ৩০টি হচ্ছে র‌্যাবের। অভিযানের শুরুর দিকে র‌্যাব ছিল সামনের সাড়িতে। বাকি ২০টি পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা। ঢাকায় ৩০ টি ও চট্রগ্রামের মোট ১১ টি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়।
সূত্র জানায়, ৫০ টি অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৭৫ জন। এরমধ্যে ২২৩ জন ঢাকায়। আর বাকি ৫৩ জন ঢাকার বাইরের অন্য জেলাগুলোতে। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২ জন, ঢাকার ৩ কাউন্সিলর, যুবলীগের ৬ জন ও কৃষক লীগের ১ জন। সরকার ও দুদক কর্তৃক দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আছে ৩৪ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ওইসব অভিযানে ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নগদ, ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর, ১৩৩ টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ৮ কেজি সোনা, ২৭ টি অস্ত্র এবং সাড়ে ৪ হাজার বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের ৫ টি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। অভিযান শুরু হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যেই প্রভাবশালী ২৩ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। এছাড়াও আরও ১০০০ ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত চলমান রেখেছে দুদকসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা। ওই ৫০০ বক্তির মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, টেন্ডারেযুক্ত ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে। সূত্র জানায়, অভিযানের বড় অংশ ঢাকায় চালানো হয়েছে। তবে এবার জেলা পর্যায়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। মাঠ পর্যায়ে যারা অল্প সময়ে দুর্নীতি করে হঠাৎ ফুলেফেপে উঠেছেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কার্যালয়ে দুর্নীতির যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তা ভেঙ্গে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দেশের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে।