রায়ে সন্তুষ্টি যশোর ও ঝিনাইদহের জুলাই শহীদ পরিবারের

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ জুলাই আন্দোলনে যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শার এবং ঝিনাইদহের তিন শহীদ পরিবার সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, জুলাই আন্দোলনে শহীদ ঝিকরগাছার সন্তান ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির (২২) এর পিতা নওশের আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসির রায়ে তিনিসহ বেনাপোলে নিহত শহীদ আব্দুল্লাহর পিতা আব্দুল জব্বার শহীদদের পরিবারের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে অপর আসামি রাজসাক্ষী আব্দুল্লাহ আল মামুনকেও একই ভাবে ফাঁসির আদেশ দিতে হবে বলেও তিনি জানান।

ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের দেউলি গ্রামের নওশের আলীর ছেলে ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির রাজধানীর সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২৪ সালের (১৯ জুলাই শুক্রবার) জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর বনশ্রীতে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন জাবির। পরে তার সহযোগীরা জাবিরকে প্রথমে মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার প্রথমদফা সার্জারি করা হয়। পরবর্তীতে জাবিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুলাই ভোরে জাবির মৃত্য্রুণ করেন। ওইদিন রাতে পুলিশের উপস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে শহীদ জাবিরের লাশ দাফন করতে বাধ্য হয় পরিবার।

শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, রায়ে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন বেনাপোলের শহীদ আব্দুল্লাহর পিতা আব্দুল জব্বার। তবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সে সময়ের পুলিশ প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুনের মাত্র ৫ বছরের কারাদন্ডে। শহীদ আব্দুল্লাহর পিতা আব্দুল জব্বার আসামিদের ভারত থেকে ধরে এনে ফাঁসির রায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। তিনি সে সময়ের পুলিশ প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি করেন। শহীদ পিতা আব্দুল জবাবার জানান তার ছেলে আব্দুল্লাহ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বেলা ২ টার সময় ঢাকা বংশাল তাঁতিবাজারের মাঝখান এলাকায় মিছিলে পুলিশের গুলিতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। ১৪ নভেম্বর ঢাকা সিএমএইস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ হন। শহীদ আব্দুল্লাহ ঢাকার সরওয়ারর্দী কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সের ছাত্র ছিলেন। শহীদ আব্দুল্লাহ শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন ঝিনাইদহের শহীদ রাকিবুল হোসেনের পরিবার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় তাদের বাসভবনে তাঁরা এ দাবি করেন। শহিদ রাকিবুল হোসেনের মা হাফিজা খাতুন বলেন, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতে আজ সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শহীদের মা হিসেবে আমি আজ আংশিক সন্তুষ্ট। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, আল্লাহ যেন আমাকে হায়াত দেন। আমি যেন শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকর দেখে যেতে পারি।

শহিদ রাকিবুল হোসেনের বাবা আবুবকর সিদ্দিক বলেন, শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামালসহ জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সকলের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। যারা গণহত্যা চালিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। আজ আমরা খুশি। শেখ হাসিনা বহু মায়ের বুক খালি করেছে। একজন নারী হয়েও সে কিভাবে এতো মায়ের সন্তানকে হত্যার আদেশ দিয়েছে তা আমরা ভেবে পায়না।