শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘিরে চোরাগোপ্তা হামলা: সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘিরে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় চোরাগোপ্তা হামলা শুরু হয়েছে। ত্রাস সৃষ্টি করতে হেলমেট পরে হঠাৎ হঠাৎ মিছিল করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের পালিয়ে থাকা কর্মীরা। সোমবার মধ্যরাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় আগুন দেওয়া একটি বাসে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। দেশে চলমান বিভিন্ন সহিংসতা ও নাশকতার প্রেক্ষাপটে দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার কথা জানালেও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। আগামী ১৩ নভেম্বরের আগে রাজধানীর সব থানা টহল ও নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

টানা কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে চোরাগোপ্তা হামলা করছে দুর্বৃত্তরা। বেশ কিছু স্থাপনার ভেতরে-বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ ও ধারাবাহিকভাবে কিছু বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

রাজধানী ঢাকা ও ময়মনসিংহে সোমবার মধ্যরাতে চার বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ঢাকায় রাইদা পরিবহনের দুইটি ও রাজধানী পরিবহনের একটি বাস পুড়ে গেছে। এদিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে দুর্বৃত্তরদের আগুনে ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় একজন পুড়ে মারা গেছেন।

ময়মনসিংহ পুলিশ জানায়, উপজেলার ভালুকজান এলাকায় একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে ছিল। বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন ভালুকজান গ্রামের বাসিন্দা জুলহাস মিয়া (৪০)।

ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকনুজ্জামান বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মুখোশ পরা তিন ব্যক্তি মাত্র তিন সেকেন্ডের মধ্যে বাসে আগুন দিয়ে চলে যায়। এতে ভেতরে থাকা জুলহাস পুড়ে যান। নিহত ব্যক্তি বাসটির চালক ছিলেন বলে ধারণা করছি। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, যাত্রাবাড়ীতে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে, রায়েরবাগে রাজধানী পরিবহনের বাসে এবং উত্তরা খালপাড়ে রাইদা পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুনের খবর পায় সার্ভিস। পৃথক তিনটি আগুনের খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপণ করা হয়।

রাত একটার দিকে রায়েরবাগে, দুইটার দিকে যাত্রাবাড়ী এবং সবশেষ ভোর চারটায় সোনারগাঁও জনপদের খালপাড় এলাকায় বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে পোড়া তিনটি বাসই সড়কের পাশে পার্কিং করা ছিল। তবে অগ্নিকান্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এছাড়া গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর সূত্রাপুরে মালঞ্চ বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের এক ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সূত্রাপুরে মালঞ্চ বাস পার্ক করা অবস্থায় ছিল। দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে আমাদের একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
কীভাবে আগুন লেগেছে প্রাথমিকভাবে তা জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

তার আগে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চলন্ত বাসে আগুন লাগে। এদিন ভোরে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় দুটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

গতকাল বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গত দুদিনে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা রুজু করা হয়েছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়া সোমবার দিনভর অন্তত ১১টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি তিনটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও নগরজুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে দেশে চলমান বিভিন্ন সহিংসতা ও নাশকতার প্রেক্ষাপটে দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

গতকাল বেবিচকের সদর দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি বিমানবন্দরগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো হাউজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে আগে থেকেই বিমানবন্দরগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এবার এর পাশাপাশি বাড়তি সতর্কতার নির্দেশনা দিয়েছি সংস্থাটি।

চিঠিতে বলা হয়, সকল বিমানবন্দরে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিমানবন্দর এলাকায় সব ধরনের টহল বৃদ্ধি এবং মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। সম্ভাব্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া সকল বিমানবন্দরে সর্বোচ্চসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সার্বিক ফায়ার সার্ভেইল্যান্স কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়।

সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মাদ কাউছার মাহমুদ জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। জনস্বার্থে সকলকে সচেতন থাকার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বেবিচক সদর দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশের সব বিমানবন্দরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’