ভৈরব নদ খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনে প্রাণ ফেরেনি বুক জুড়ে দূষণ আর দুর্গন্ধের প্রতাপ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের প্রাণ ভৈরব নদে শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে খনন, সৌন্দর্যবর্ধন আর উন্নয়ন প্রকল্পে। কিন্তু বাস্তবে নদটি আজও আগের মতোই দূষিত, মৃতপ্রায় ও দুর্গন্ধময়। নদীর পানিতে জমে থাকা পচা বর্জ্য থেকে থে বের হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।

জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৭৯ কোটি ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করে যশোরের ভৈরব নদ খনন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, পানিপ্রবাহ নির্বিঘ্ন করা এবং নদে প্রাণ ফিরিয়ে আনা।

প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও সেই প্রাণের স্পন্দন আজও ফেরেনি। বরং এক সময়ের খরস্রোতা ভৈরব এখন মৃতপ্রায়, তার বুকজুড়ে কচুরিপানা, আবর্জনা আর কালচে পানি।

নদটির দুপাড়ে চলাচলে দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরতে বাধ্য হন স্থানীয়রা। স্রোতের স্বপ্ন দেখানো ভৈরব এখন বদ্ধজলাশয়, কোথাও কোথাও সংকুচিত হয়ে সরু খালে রূপান্তরিত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিমত, এ যেন কোটি টাকার কাগুজে প্রকল্প, যার সুফল নদ বা জনগণ কেউই পায়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৯ কোটি টাকায়।

এই প্রকল্পের আওতায় চৌগাছার তাহেরপুর থেকে সদর উপজেলার বসুন্দিয়া পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার নদ পুনঃখনন করা হয়। বসুন্দিয়া থেকে আফ্রা ঘাট পর্যন্ত চার কিলোমিটার অংশ ড্রেজিং করা হয়। এছাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে নদ তীরের ২০০ মিটার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ব্যয় করা হয় ৭কোটি ৮০ লাখ টাকা।

তবে কাজের মান ও পরিকল্পনা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, নদের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও নদ পরিষ্কার না করেই খননের কাজ দেখানো হয়েছে কাগজে-কলমে। অনেক স্থানে নদী খনন না করেই মাটি কেটে নদ তীরে স্তূপ করা হয়েছে, যা আবার কিছুদিনের মধ্যেই বৃষ্টির পানিতে ফিরে গেছে নদে। খননের পরও অনেক জায়গায় পানিপ্রবাহ বন্ধ থেকে গেছে আগের মতোই।

পরিবেশবিদদের মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অদূরদর্শিতা, পরিকল্পনাহীনতা এবং দুর্নীতির কারণেই ভৈরব নদ পুনঃখনন প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে।

পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, নদ পুনরুদ্ধারের আগে উজান থেকে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও নদে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা জরুরি ছিল। কিন্তু এই মৌলিক কাজগুলো উপেক্ষা করে শুধু খনন দেখিয়ে অর্থ ব্যয়ের প্রমাণ দেখানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খননের পর কিছুদিন মনে হয়েছিল নদ নতুন জীবন পেয়েছে। কিন্তু অল্প দিনে তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। এখন শুধু কচুরিপনা আর দুর্গন্ধ।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী দাবি করেন, কাজ প্রকল্পের নকশা অনুযায়ীই হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ভৈরব নদ খননে কোনো অনিয়ম হয়নি। তবে নদীর ওপর নির্মিত সেতুগুলোর দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় জোয়ার-ভাটার প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেতুগুলো পুনর্নিমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’