যশোরের বৃটিশ সৈনিক শামসুদ্দিনের ইন্তিকাল, সেনাবাহিনীর শ্রদ্ধা

0

চুড়ামনকাটি(যশোর)সংবাদদাতা॥ ব্রিটিশ সৈনিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শামসুদ্দিন বিশ্বাস বুধবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তিকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ১০৬ বছর।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের দোগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা শামসুদ্দিন বিশ্বাসের মরদেহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান শেষে যোহর বাদ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এছাড়া তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।

প্রয়াত শামসুদ্দিনের বড় ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা হেলা সাংবাদিকদের জানান, তার পিতা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বুধবার ভোর ৫ টার দিকে ইন্তিকাল করেন।

তিনি আরো জানান,তার পিতা বৃটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে ভাতা পেয়েছেন।

মৃত্যুর খবর পেয়ে বুধবার যোহর বাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মরহুম শামসুদ্দিন বিশ্বাসকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর যোহর বাদ বাড়িতে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে বৃটিশ সৈনিককের মৃত্যুর খবর পেয়ে যশোর জেলা প্রশাসকসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা মরহুমের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন। যশোরের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি তার বাড়িতে যান ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১১ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে তিনি ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগদান করেছিলেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ৬৪১৪৬০। ১৯৩৯ থেকে শুরু করে ১৯৪৫ সাল-পুরো ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ময়দানে ছিলেন এই যোদ্ধা।

প্রায় সাত মাস আগে স্মৃতি রোমন্থন করে ল্যান্স কর্পোরাল মো. সামসুদ্দিন জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ চলাকালে একবার সিঙ্গাপুরে তিন হাজার সহযোদ্ধাসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ছিলেন তিনি। সে অবস্থায়ই টানা তিন মাস যুদ্ধ চালিয়ে ছিলেন তারা। বিশ্বযুদ্ধের পরও সেনাবাহিনীর চাকরিতে ছিলেন তিনি।

১৯৪৭ সালের দেশভাগ হয়ে গেলে মো. সামসুদ্দিন যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। পরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে চলে আসেন। যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। এর কিছুকাল পর অবসরে যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এ লড়াকু যোদ্ধা। মো. সামসুদ্দিনের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। স্ত্রী জাহেদা খাতুন মারা গেছেন ১৯৯৯ সালে।

তার জানজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপি নেতা হাজী আনিসুর রহমান মুকুল, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইদ, সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক তানভীর রায়হান তুহিন, ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আবু তালেব, ওলিয়ার রহমান, রফিকুল ইসলাম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মাস্টার শিমুল হোসেন, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ,কাশিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান মিলন, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব পিকুল হোসেন, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আজিজুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আসলাম হোসেন, ছাত্রদলের মেহেদী হাসান প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।