যশোরে এবার দুর্গাপূজায় আতশবাজি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা নিষিদ্ধ

0

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ যশোরে এবার ৭০৫টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হবে। তাছাড়া এ বছর পূজার সময় আতশবাজি পোড়ানো, পটকা ফোটানো এবং মন্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিসর্জন করার সরকারি নির্দেশের কথা যেমন জানানো হয়, তেমনি পূজা উপলক্ষে কোনো ধরনের মেলার আয়োজনও করতে দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়। মাদক যেনো ছড়িয়ে না পড়তে পারে সে ব্যাপারেও দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়।

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

গত বছরের মতো দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলেই পূজা উদযাপন নির্বিঘ্ন করারও সিদ্ধান্ত হয়। যশোরে গত বছর প্রশাসনের পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা মন্ডপ পাহারা দেওয়ার মাধ্যমে দুর্গা পূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। এবারও তেমন হবে এবং কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না বলেও সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এছাড়া প্রতি মন্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা, ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা রাখার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া পূজার ৫ দিন মন্ডপের আশেপাশে ইসলামী জলসা বা ওয়াজ মাহফিল আয়োজন না করার ব্যাপারেও গুরুত্ব দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় পূজার নিরাপত্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে। এতে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দিতে বলা হয়েছে।

তবে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জনের সময় বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ।

জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে রোববার দুপুরে এই সভা হয়। সভা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরূফা সুলতানা।

সভায় জানানো হয়, এ বছর যশোর জেলায় ৭০৫টি মন্দির ও মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হবে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৬২টি, অভয়নগরে ১২৭টি, কেশবপুরে ৯৮টি, মণিরামপুরে ৯৬টি, বাঘারপাড়ায় ৯১টি, ঝিকরগাছায় ৫৪টি, চৌগাছায় ৪৮টি ও শার্শায় ২৯টি মন্দির রয়েছে। ২০২৪ সালে জেলায় ৬৫২টি শারদীয় দুর্গাপূজা হয়েছিল। ২০২৩ সালে জেলায় মোট মন্দির ও মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৭৩৩টি। সেই হিসেবে গত বছর ৮১টি মন্দিরে দুর্গাপূজা কমলেও এবার বেড়েছে ৫৩টি।

গত বছর ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শারদীয় দুর্গাপূজা আয়োজনে নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ ছিল। কিন্তু প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় জেলায় সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপন হয়েছে। এ বছর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে পূজা হওয়ায় সরকার আগাম সতর্কতার পাশাপাশি নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক ও পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজন সরকার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরূফা সুলতানা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপাঙ্কর দাস রতন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, জেলা জামায়াতের আমীর গোলাম রসুল, এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক আবু তাহের মোহাম্মদ পারভেজ, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা খালেদ সাইফুল¬াহ, এছাড়া বক্তব্য দেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নির্মল কুমার বিট, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চৌগাছা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ বলাই চন্দ্র পাল, শার্শার সভাপতি বৈদ্যনাথ দাস, ঝিকরগাছার সভাপতি দুলাল অধিকারী, সদরের সভাপতি রবিন পাল, কেশবপুর উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল সাহা, বাঘারপাড়া উপজেলা সভাপতি প্রণয় সরকার, যশোর পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক উৎপল ঘোষ, কেশবপুর উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্য সচিব উৎপল দে প্রমুখ।