ভবদহে ব্লুইসগেটের কপাট খোলার সুফলে বাধ সেধেছে যশোরের পানি

0

শিকদার খালিদ ।। তিন বছর পর অবশেষে খুলে দেওয়া হল যশোরের ভবদহের ২১ ভেন্টের সুইচ গেটের কপাট। যা বন্ধ রাখা হয়েছিল বিগত সরকারের এক সংসদ সদস্যের প্রভাবে নেওয়া অকার্যকর সেচ প্রকল্পের কারণে। বর্তমানে ভাটির সময় স্বাভাবিকভাবে নিস্কাশন হচ্ছে আবদ্ধ পানি। কিন্তু সুফল পাচ্ছেন না দুর্গত এলাকার মানুষ।

যশোর শহরের পানিতে এখন ভাসছে ভবদহ। যশোরের ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করে আসছেন সুইস গেটগুলোর কপাট নিয়ম মেনে খোলা ও বন্ধ করলে তাদের ভোগান্তি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। কিন্তু তা অবজ্ঞা করে ২০২১ সালে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয়রা এ জন্য দায়ি করেন যশোর-৫ আসন অর্থাৎ মনিরামপুর উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ -ব্যাণার্জী জানান, বন্ধ থাকা ভবদহের একুশ ভেন্টের ৮টি কপাট খুলে দেওয়া এবং নদীর সাড়ে আট কিলোমিটার খনন করে পলি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে নদীতে যখন ভাটা থাকে তখন স্বাভাবিকভাবে পানি নিষ্কাশন হয়। তখন সেচের প্রয়োজন হয় না। জোয়ারের সময় আবার সেচ যন্ত্র চালু করা হয়। এই দুইয়ের সমন্বয়ে পানির চাপ কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত খনন কাজ শুরু হবে। তখন জলাবদ্ধতা আরও কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এখন যে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে তা যশোর শহরের পানির কারণে। হরিণা বিল ও মুক্তেশ্বরী নদী হয়ে এ শহরের পানি গিয়ে পড়ে ভবদহে। বিল হরিণার পানি যত দিন নিষ্কাশন হওয়া বন্ধ না হবে তত দিন জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে না। কারণ এ পানি প্রবাহ শেষ হওয়ার পর স্থানীয় পানি যাওয়া শুরু হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বিল হরিণা ও মুক্তেশ্বরীর পানি অন্য কোথাও নিষ্কাশন করা যায় কিনা সে বিষয়ে ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং (আই ডব্লিউ এম) সমীক্ষা চালাচ্ছে। ভৈরব বা অন্য কোথাও নিষ্কাশন করা গেলে ভবদহের ভোগান্তি কমে আসবে।

আরও জানান, সুইস গেটগুলো অনেক প্রাচীন। সেই ষাটের দশকে তৈরি করা।

সুইস গেটের সবগুলো কপাট এক সঙ্গে খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য একটু একটু করে খুলতে হচ্ছে। সবগুলো যদি খোলা যায় তবে স্বাভাবিক প্রবাহেই জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমে আসবে অনেক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবদহ এলাকার কর্মী জাকির হোসেন বলেন, এখন সারাদিন মোটর চালাতে হচ্ছে না। একুশ ভেন্টের ৮টি গেট খোলার পর ভাটির সময় পানি নিস্কাশন হচ্ছে এমনিতেই। এতে বিদ্যুৎ খরচ কমেছে অনেক।

স্থানীয় সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রকল্পের পর প্রকল্প সাজিয়ে ভবদহকে দুর্গত করা হয়েছে। কিন্ত সুইস গেট খুলে ও পলি অপসারণের জন্য নিয়মিত খনন করলেই এ দুঃখের অবসান হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে সেনাবাহিনী খুব শিগগির নদী খননের কাজ শুরু করবে। এছাড়া যশোরের পানি যাতে ভবদহ এলাকায় না যায় সেজন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যাণার্জী।

জলাবদ্ধ অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার

জলাবদ্ধ ইউনিয়নগুলোর মধ্যে রয়েছে মঙ্গলকোট, বিদ্যানন্দকাটি, কেশবপুর, পাজিয়া, সুফলাকাটি, গৌরিঘোনা, হরিদাসকাটি, সুন্দলী, চলশিয়া, পায়রা, কুলটিয়া, মনোহরপুর, দুর্বাডাঙ্গা ও শ্যামকুড়।

স্থানীয়রা বলেছেন, এ তিন উপজেলার ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশিত হয় ভবদহের ২১, ৯ ও ৩ ভেন্টের সুইস গেট দিয়ে হরি নদিতে। কিন্তু পলিতে সুইস গেটগুলো অচল হয়ে থাকায় পানি সরছে না আর।

গত বছর ভবদহ অঞ্চলের মানুষের এই শোচনীয় অবস্থার জন্য যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করেছেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আব্দুল হামিদ।

তার অভিযোগ, “টাইডাল রিভার ম্যাজেমেন্ট-টিআরএম প্রকল্প বাদ দিয়ে ২০২২ সাল থেকে স্বপন ভট্টাচার্যের মদদে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল, সেটাই এখন ভোগান্তির কারণ। ওই বছরের ২ জানুয়ারি ও ১৫ নভেম্বর ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার সেচ প্রকল্প ও প্রস্তাবিত প্রায় ৪৫ কোটি টাকার ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে যশোরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি ভাবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি।