পালবাড়ী থেকে মনিহার ভয়ংকর চার কিলোমিটার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের পালবাড়ী থেকে শিক্ষা বোর্ড হয়ে মনিহার মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি বর্তমানে সম্পূর্ণ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সড়কটি এখন সাধারণ যাত্রীসহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত, কাদা ও পানি জমে চলাচলের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সাবেক মানসী সিনেমা হল থেকে শুরু করে মার্কাজ মসজিদ হয়ে শিক্ষাবোর্ড পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন অংশে পানি ও কাদায় ভরা গর্তের কারণে সড়কের আসল চেহারা আর দেখা যাচ্ছে না। গত প্রায় এক মাস ধরে টানা বৃষ্টিতে এসব গর্ত এখন ছোট জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

সড়কটি যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী এবং হাজার হাজার যানবাহন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে কোনো স্থায়ী সংস্কার না হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, রিকশা ও সিএনজিচালিত যানবাহন গর্তে পড়ে প্রায়ই বিকল হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও চাকা গর্তে আটকে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

উপশহরের বাবলাতলা এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তায় স্থায়ী কোনো সংস্কার হয়নি। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন যাতায়াতের সময় মনে হয় যেন ডোবা বা এঁটেল বিল পার হচ্ছি।’

এই সড়কের পাশেই রয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড, সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। ফলে অভিভাবকরাও রয়েছেন চরম উদ্বেগে। রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক জানান, ‘রাস্তাটির করুণ অবস্থায় সন্তানকে পাঠিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।’

একই অভিযোগ করে ট্রাকচালক মনসুর আলী বলেন, ‘এই রুট দিয়ে মাগুরা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে ঢাকাগামী অসংখ্য গাড়ি চলাচল করে। অথচ রাস্তার করুণ দশায় প্রতিদিন বিভিন্ন গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। সংস্কারে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’

যশোর পৌরসভা এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন এই সড়কটির দিকে দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর কোনো সংস্কার হয়নি। সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরের আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সাময়িকভাবে ইট-খোয়া দিয়ে কিছু অংশ চলাচলের উপযোগী করেছিল। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই ওই প্রলেপ উঠে গিয়ে নিচের ইট-খোয়া বেরিয়ে এসেছে। যানবাহনের চাপে সেগুলোও এখন উঠে গিয়ে আরও বড় গর্তের সৃষ্টি করেছে, আর গর্তে জমে থাকা পানি রাস্তার অবস্থা আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। কোথাও কোথাও এত গভীর পানি জমেছে যে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘সড়কটি সংস্কারে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। তবে কাজ শুরু করতে এখনো ঠিকাদার নিয়োগের অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদন পেতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে। তাছাড়া, বৃষ্টির আধিক্যের কারণে আপৎকালীন সংস্কার কাজ করাও এখন কঠিন।’