এক যুগ যশোর ডিএফএ’র সভাপতি পদ আঁকড়ে থাকা মিঠুর বিতর্কিত অধ্যায় : অভিযোগের পাহাড়

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ প্রায় এক যুগ ধরে যশোর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ)-এর সভাপতির পদ আঁকড়ে ছিলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু। তার এই দীর্ঘ মেয়াদকালে যশোরের ফুটবল উন্নয়নের বদলে কেবলই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দেশের ২৯টি জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি বিলুপ্তির তালিকায় যশোর ডিএফএ’র নাম আসার পর তার দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারের চিত্র আরও স্পষ্ট হয়েছে।

যশোরের ফুটবল অঙ্গনের একাধিক কর্মকর্তা, সাবেক ফুটবলার এবং ক্লাব কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ২০১২ সালে দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসাদুজ্জামান মিঠু প্রথমবার ডিএফএ’র সভাপতি হন। এরপর ২০১৫, ২০১৯ ও সর্বশেষ ২০২৩ সালেও তিনি কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে পদ ধরে রাখেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ফুটবলের উন্নয়নে কোনো কাজ না করে নিজের রাজনৈতিক দল ও ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।

যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে সর্বশেষ কবে ফুটবল লিগ হয়েছে তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। ফুটবল খেলা শহর থেকে অজপাড়া গাঁয়ের গ্রামে নিয়ে যাওয়া, অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব লিগ চালানো, এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রথম বিভাগের খেলোয়াড়কে দ্বিতীয় বিভাগে খেলানোর মতো ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।

সাবেক ফুটবলার ও বর্তমান ফুটবল প্রশিক্ষক হালিম রেজা ‘যশোরের ফুটবল ধ্বংসের কারিগর’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আসাদুজ্জামান মিঠু যশোরের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল পদ আঁকড়ে ধরে রাখা। অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রেখে তিনি যশোরের শামস-উল-হুদা স্টেডিয়াম থেকে ফুটবল খেলাকে গ্রামে নিয়ে গেছেন। সেখানে তিনি অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব লিগ চালিয়েছেন। এমনকি নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রথম বিভাগের খেলোয়াড়দের দ্বিতীয় বিভাগে খেলার সুযোগ দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আসাদুজ্জামান মিঠু যেভাবে যশোর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন পরিচালনা করেছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি যেন ক্ষমতা অপব্যবহারের একচ্ছত্র অধিকারী। চার বছর পর পর বিশ্বকাপের মতো করে যশোরে ফুটবল লিগ আয়োজন করতেন, তাও আবার যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের বাইরে অজপাড়া গাঁয়ের কোনো গ্রামে। ডিএফএ’র সকল কার্যক্রম তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যালয় থেকে পরিচালিত হতো। কেউ কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করাসহ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলা দেয়ার হুমকি দিতেন। এভাবেই তিনি যশোরের ফুটবলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছেন কেবল পদ আকড়ে থাকার জন্য।’

যশোর সৌখিন ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আখতারুজ্জামানও অভিযোগ করেন মিঠুর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘আসাদুজ্জামান মিঠুর কাছে নিয়ম বলতে কিছু ছিল না, সে যা করত সেটাই নিয়ম হিসেবে গণ্য হতো। আমার ক্লাবকে সে অবৈধভাবে সাসপেন্ড করেছিল। মিঠু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে যশোরের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা এনে আত্মসাৎ করতেন। এই বিষয়ে রীতিমতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন থেকে তদন্তও হয়েছে।’

রাহুল স্মৃতি সংসদের কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান টনি তার নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে আসাদুজ্জামান মিঠু নিজের দল আবহনী ক্রীড়া চক্রকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য অবৈধভাবে আমার দলের ৯ পয়েন্ট কেটে নেয়। আমার দল নিশ্চিত চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে জেনে সে এমন অবৈধ পথ বেছে নিয়েছিল। যে কারণে আমি বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করি।’

সাবেক ফুটবলার এবং ঈদ ফুটবল কোচিং সেন্টারের কর্মকর্তা এনাম মাহমুদ খান বাবু জানান, ‘২০২৩ সালের যশোর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অবৈধ নির্বাচন নিয়ে আমি বাদী হয়ে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত তখন যশোর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি কেন অবৈধ নয়, এই মর্মে রায় প্রদান করেন।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সর্বশেষ, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নতুন কমিটি দায়িত্ব পেয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দেশের ২৯টি জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফএ) কমিটি বিলুপ্ত করে। সেই তালিকায় যশোর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও রয়েছে।’

যশোর ডিএফএ’র কমিটির বিলুপ্তির পর আসাদুজ্জামান মিঠু বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন এবং তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।