ঈদের পর প্রথম চামড়ার হাটে নিরাশা রাজারহাটে, শনিবারের আশায় ব্যবসায়ীরা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদের পর গতকাল মঙ্গলবার প্রথম চামড়ার হাট জমেনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম যশোরের রাজারহাটে। চামড়ার সরবরাহ যেমন ছিল কম, তেমনি বেচাকেনাও হয়নি আশানুরূপ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী শনিবারের হাট জমজমাট হবে।

চামড়ার বৃহত্তম মোকাম যশোরের রাজারহাট। এখানে এক সময় সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার হাট বসলেও গত এক বছর ধরে শুধু শনিবারেই হাট বসে। প্রতি কোরবানির ঈদ চামড়া ব্যবসায়ীদের মৌসুম হিসেবে পরিচিত। এসময় তাদের চামড়ার যোগান হয় সবচেয়ে বেশি। তাই ঈদের পরের হাটটি জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু এ বছর তা হল না।

সরকার নির্ধারিত দরের আশায় চড়া মূল্যে চামড়া কিনে এদিন বিপাকে পড়েন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। আড়তদারদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় অনেকেই চামড়া বিক্রি না করে ফিরে গেছেন এবং পুঁজি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন।

চামড়া ব্যবসায়ী সাইদ আহমেদ নাসির বলেন, এবছর শনিবার ছিল ঈদ। ওই দিন হাট বসেনি। সে হিসেবে মঙ্গলবার হাট জমজমাট হওয়ার আশা ছিল ব্যবসায়ীদের। অনেকে হাটে চামড়ার সরবরাহ বেশি ও বাইরে থেকে ক্রেতা আসার আশা করেছিলেন। কিন্তু আশানুরূপ জমেনি হাট। তাই দামও ছিল অপ্রতুল। আশাহত হয়েছেন চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তবে মান সম্পন্ন চামড়া যারা এনেছিলেন তারা সঠিক দাম পেয়েছেন।

মঙ্গলবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, চামড়ার সরবরাহ খুব কম। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ভ্যান ও ছোট ট্রাকে করে আনা চামড়া স্তূপ করে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল নগণ্য। হাটে আসা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বড় আকারের চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, ছাগলের চামড়ার দাম নেমে এসেছে প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকায়। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচসহ মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিটি চামড়া সংগ্রহে তাদের যে খরচ হয়েছে, বর্তমান বাজারে সেই দাম উঠছে না।

ৎকার্তিক দাস নামে এক মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, ‘দেড়শো গরুর চামড়া নিয়ে এসেছি। প্রতিটি চামড়া কেনা ও সংরক্ষণ বাবদ খরচ পড়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু হাটে দাম উঠছে সর্বোচ্চ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এই দামে বিক্রি করলে পুঁজিই থাকবে না। তাই আগামী শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।’

একই সুরে কথা বললেন রবিউল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘সরকার চামড়ার দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় গ্রামের মানুষ মাঝারি আকারের চামড়াও ৫০০-৬০০ টাকার নিচে বিক্রি করতে চায়নি। সেই চামড়া লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ দিয়ে হাটে আনতে প্রতি পিসে খরচ পড়েছে ৮০০-৯০০ টাকা। এখন আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিয়েছে। সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কিনে আমাদের এখন পথে বসার উপক্রম।’ ব্যবসায়ীদের এই হতাশার পেছনে ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন তারা। তাদের মতে, এই সিন্ডিকেটই পরিকল্পিতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, যার ফলে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তবে রাজারহাটের আড়তদার হাসিব চৌধুরী ভিন্ন কথা বলছেন। তার মতে, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা ভিন্ন। ট্যানারি থেকে আমরা ভালো দাম না পেলে বেশি দামে চামড়া কিনবো কীভাবে? তবে আমরা আশা করছি, আগামী শনিবার ঢাকা ও অন্যান্য জেলার বড় ব্যবসায়ীরা এলে বাজার চাঙ্গা হবে।’
রাজারহাট চামড়া মোকামের ইজারাদার খুরশিদ আলম বাবুও আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার নামমাত্র হাট ছিল। মূল হাট হবে আগামী শনিবার। সেদিন লক্ষাধিক পিস চামড়া উঠবে বলে আমরা আশা করছি।

চামড়া সংরক্ষণে খরচ কিছুটা বাড়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে, এটা সত্যি। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বড় ব্যবসায়ীরা হাটে আসার জন্য যোগাযোগ করছেন। আশা করি, আগামী হাটগুলোতে সবাই কাক্সিক্ষত দাম পাবেন।’

খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার হিসেবে পরিচিত যশোরের রাজারহাট। এখানে তিন শতাধিক আড়ৎ রয়েছে এবং খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা ছাড়াও ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করতে আসেন।