নওয়াপাড়ায় কৃষকদল নেতা তরিকুল হত্যায় আটক হয়নি কেউ, লাশ নিয়ে মিছিল যশোরে

0

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর ও অভয়নগর॥ যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম হত্যাকান্ডে গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত মামলা ও জড়িত কেউ আটক হয়নি। হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নিয়ে যশোরে মিছিল বের হয়। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে যান এবং নিহতের স্বজনদের সমবেদনা জানান। এদিকে এ ঘটনার পর সংক্ষুব্ধ লোকেরা ডহর মশিহাটী গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি ও সুন্দলী বাজারে দোকান ভাঙচুর করেছে।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে তিন সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মেডিকেল অফিসার ডা. জোবাইদা আফসানা এই তথ্য জানান, তরিকুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার দু’হাত, কাঁধ, মাথা ও মাথার পেছনের দিকে এমনভাবে কোপানো হয়েছে যে, মাথার ঘিলু বের হয়ে গেছে। মাথার পেছনেই ৭/৮টি ধারালো অস্ত্রের কোপের দাগ রয়েছে। তিনি এটিকে একটি নৃশংস হত্যাকান্ড বলে উল্লেখ করেন।

নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের পিন্টু বিশ্বাসের বাড়িতে ঘের নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে সন্ত্রাসীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের কোপে খুন হন। এরপর থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে গভীর রাতে মর্গে পাঠায়।

গভীর রাতেই লাশ মর্গের সামনে জড়ো হন জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত হাসপাতালে যান। দলীয় নেতা-কর্মীরা তাদের সহকর্মী তরিকুল ইসলামের খুনের ঘটনা জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এ সময় তাদের সান্ত্বনা দেন এবং নিহত তরিকুল ইসলামের পরিবার যাতে সঠিক বিচার পায় সে ব্যাপারে সকলকে সচেষ্ট থাকার পরামর্শ দেন। তিনি নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর লাশ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিল সহকারে লাশ অভয়নগরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনসহ নেতৃবৃন্দ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।

শুক্রবার আসরের নামাজের পর নিহত কৃষকদল নেতা তরিকুলের নামাজে জানাজা ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি ও পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আয়ুব, অভয়নগর থানা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান,সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু, মনিরামপুর থানা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি সভাপতি আবু নঈম, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, সার সিমেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল গনি সরদার,সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন, বিএনপি নেতা শানসুর রহমান, মশিয়ার রহমানসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতা -কর্মী উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

ময়না তদন্ত শেষে দুপুরে নিহত কৃষকদল নেতা তরিকুলের লাশ তার গ্রামের বাড়ি নওয়াপাড়া পৌরসভার ৩ ওয়ার্ড ধোপাদীতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতরণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ- বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। তাকে একনজর দেখতে এসে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এদিকে এই হত্যাকান্ডের জের ধরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই এলাকার ১৪-১৫ টি বাড়িসহ টোঙঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার সুন্দলি ইউনিয়নের ডহরমশিয়াটি গ্রামে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদারকে পিন্টু বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির ঘরের মধ্যে ঢুকে গুলি করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। নিহত তরিকুল ধোপাদী গ্রামের মৃত ইব্রাহিম সরদারের ছেলে। এই ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ডহর মশিহাটি এলাকায় কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলামের একটি ঘের রয়েছে। ওই ঘেরটি লিজ দেওয়ার জন্যে ওই গ্রামের পিন্টু বিশ্বাসের বাড়িতে যান তরিকুল ইসলাম। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কতিপয় দুর্বৃত্ত তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এরপর কয়েক রাউন্ড গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলীম জানান, ঘটনার পর থেকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে দুজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই রির্পোট লেখা পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের হয়নি।

এদিকে তরিকুল ইসলামের খুনিদের গ্রেফতার ও এলাকার কতিপয় মানুষের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক, বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ।

ঘেরের বিরোধকে কেন্দ্র করে একজন যুবককে হত্যা করার ঘটার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, আমরা তরিকুল হত্যার বিচার চাই। দোষীদের আটক ও বিচার চাই। কিন্তু তরিকুল হত্যাকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল শুধু লুটপাটের উদ্দেশ্যে ডহর মশিহাটি ( বাড়েদা) গ্রামে ১৯/২০ বাড়িতে লুটতরাজ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে। সাগর নামে এক যুবককে অপহরণ করেছে।

মোটরসাইকেল নিযে গেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুন্দলী বাজারেও লুটপাট, ভাঙচুর হয়েছে, মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও সরকারকে আরো জোরালো ও উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের যশোর জেলা কমিটির সম্পাদক তসলিম উর রহমান।

অপর এক বিবৃতিতে নিন্দা জানান, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি যশোর জেলা সভাপতি ডা. আব্দুল খালেক লস্কর, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, অভয়নগর থানা কমিটির সভাপতি আবু বক্কার সরদার, সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক ও মনিরামপুর থানা কমিটির সভাপতি পরিতোষ দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ গাইন।