কর্মবিরতিতে স্থবির বেনাপোল কাস্টমস হাউস

0

বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা॥ কাস্টমস কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে আমদানিকৃত পণ্য শুল্কায়নের কাজসহ বন্দর থেকে খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

শুল্কায়নের কাজ বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। কর্মবিরতিতে বন্দর থেকে পণ্য খালাস নিতে না পারায় প্রতিদিন বন্দরের ভাড়া গুণতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবে আমদানি-রফতানিসহ আনলোড প্রক্রিয়া ও যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক আছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জারিকৃত অধ্যাদেশ বাতিল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে অপসারণসহ চার দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২১ মে (বুধবার) প্রেস ব্রিফিংয়ের পর থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যানের সাথে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে আরো বলা হয়েছে ২২ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিসমূহের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

আজ বৃহস্পতিবার এনবিআর এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে রফতান ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে।

আগামী ২৪ মে (শনিবার) ও ২৫ মে, ( রোববার) কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশনসমূহ ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুইদিন কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশনসমূহে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে রফতানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।

আগামী ২৬ মে ( সোমবার) থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। বুধবার দুপুরের পর থেকে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে শুল্কায়নের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এই ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বেনাপোল কাস্টমস হাউসে শুল্কায়নের সকল ধরনের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। বেনাপোল কাস্টমস হাউসে কর্মকর্তারা বুধবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন। গত ১৪ মে বুধবার থেকে ১৯ মে পর্যন্ত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে অন্যান্য শুল্ক স্টেশনের মত বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারাও কর্মপতি পালন করে আসছিলেন।

বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে,কাস্টমস হাউজ খোলা। তবে অধিকাংশ টেবিলই খালি।কর্মকর্তারা বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন।কিছু কর্মকর্তা আসনে থাকলেও কোন কাজ করছেন না। বেনাপোল -পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে শুল্কায়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে বন্দর থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না ।আর পণ্য খালাস না হওয়ার কারণে আমদানিকারকদের প্রতিদিন বন্দরের ভাড়া গুণতে হচ্ছে । আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন,কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি সত্ত্বেও বেনাপোল বন্দর দিয়ে দু দেশের মধ্যে আমদানি- রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিলেও আওতামুক্ত রাখা হয়েছে আমদানি- রফতানি বাণিজ্য। স্বাভাবিক রয়েছে ভারত -বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসান কাস্টমস কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতির সত্যতার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষণ করে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে কর্মবিরতি পালন করছি।