ঘুম নেই দর্জি পাড়ায়

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোর শহরের দর্জি পাড়ার কারিগররা। কার্টিং মাস্টার ক্রেতার শরীরের মাপ অনুযায়ী কাপড় কাটছেন, আর কারিগররা সেটি নিপূণ হাতে সেলাই করে পোশাক তৈরি করছেন। ঈদের আগেই পোশাক ক্রেতার হাতে তুলে দিতে রাতদিন কাজ করছেন কারিগররা। খাওয়া-ঘুম বিশ্রামের ফুসরত পাচ্ছেন না তারা। এরপরেও পোশাক তৈরি ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, এ বছর তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাননি।

গার্মেন্টেসে তৈরি অভিজাত নামিদামি ব্রান্ডের পোশাকের ভিড়ে দর্জির হাতের তৈরি পোশাকে কদর এখনো রয়ে গেছে। বিশেষ করে ঈদ পার্বনে রুচিশীল ক্রেতারা অভিজাত শপিং মল থেকে নামিদামি কোন ব্রান্ডের পোশাক না কিনে ছিট কাপড় কিনে ছুটে যান দর্জি বাড়িতে। দর্জির নিপূণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি পোশাক ছাড়া তাদের ঈদ যেন অপূর্ণ থেকে যায়। শহরের এইচ এম এম রোডে নকশী কুটির, আল-ফালাহ টেইলার্স, মাহবুব টেইলার্স, ডলফিন টেইলার্স, রাহুল টেইলার্স, ব্রাদার্স টেইলার্স, দোলন টেইলার্স, সান টেইলার্স নামের বহু অভিজাত দর্জি দোকান রয়েছে। যেখানে বছর জুড়ে পোশাক তৈরি কর্মযজ্ঞ চলে। ঈদ কিংবা অন্য কোন পার্বন এলে সেটি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। পুরুষের তৈরির পোশাকের তালিকা রয়েছে পাঞ্জাবি, পাজামা, ট্রাউজার, জুব্বা। অন্যদিকে মহিলাদের তৈরি পোশাকের তালিকায় রয়েছে সালোয়ার, কামিজ, ফ্রগ, বোরকা, হিজাব, মৌচাক ফ্রগ।

শনিবার শহরের এইচ এম এম রোডের একটি তৈরি পোশাকের দোকানে কথা হয় মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আবুল হাশেমের সাথে। তিনি বলেন, আমি দর্জির হাতে তৈরি পোশাকে অভ্যস্থ। বছরের বিভিন্ন সময়ের পাশাপাশি প্রতি রমজানের ঈদে আমি পোশাক তৈরি করি। তাই প্রতিবারের মত এবারের ঈদেও পাঞ্জাবি ও পাজামা তৈরি করতে এসেছি।

তবে এবার রমজানের ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পান নি এমনটি দাবি করছেন, তৈরি পোশাকের প্রতিষ্ঠানগুলো। জেলা তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর কাজ তুলনামূলক কম। বিগত বছর রমজানের আগে কিংবা রমজান শুরু হলেই কাজের চাপে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিতাম। ঈদের পোশাক তৈরির অর্ডার নেওয়া বন্ধ এমন লেখা টানিয়ে করে দিতাম।

এ বছর রমজানের প্রথম দশকে কাজের চাপ অনেক কম ছিল। দ্বিতীয় দশকে কাজের চাপ বেড়েছে। কাজের অর্ডার বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। বতর্মানে কাজের যে অবস্থা তাতে করে অর্ডার নিলে ঈদের আগে ডেলিভারি দিতে কোন সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, এ বছর তৈরি পোশাকের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়নি। বিগত বছরের মূল্য তালিকা অনুযায়ী পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। রমজান শুরুর আগেই কারিগরদের শতকরা ১০ ভাগ মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

নকশী কুটিরের কাটিং মাস্টার হুমায়ূন কবির বলেন, বিগত বছর গুলিতে রমজান শুরু হলে কাজের চাপে দম ফেলার সময় থাকতো না । কিন্তু এ বছরে কাজ চাপ এখনো পর্যন্ত তুলনামূলক কম। সামনে তৈরি পোশাকের চাহিদা আছে তো আগের মতো নেই।

পোশাক তৈরির কারিগর ও জেলা কারিগর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, ঈদের আনন্দে রমজান মাসের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করতাম। এমন কি রমজানের শেষের দিকে এসে সারা রাত জেগে কাজ করেছি। কাজের মাধ্যমে ঈদের আনন্দ খুঁজে পেতাম। এ বছরও কাজের চাপ আছে, তবে বিগত বছরের মতো না।