ঈদ বাজারে ছুটির দিনে ক্রেতার ঢল

0

আকরামুজ্জামান ॥ শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে যশোরের ঈদ বাজারে ক্রেতার ঢল নামে। সকাল থেকেই জেলা শহরের প্রতিটি মার্কেটেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। রোজার মাঝামাঝি সময়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে যার মতো ছুঁটে আসেন ঈদের কেনাকাটার জন্য। নতুন কাপড় কিনতে সবাই ভিড় করেন দোকানগুলোতে।

বিক্রেতারা জানান, রমজানের এই প্রথম সরকারি ছুটির দিনে প্রত্যাশিত ক্রেতাদের দেখা পান তারা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ বাজারে প্রতিটি পোশাকের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি।

শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে শহরের এইচএমএম রোড, কাপুড়িয়াপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মানুষের পা ফেলার জায়গা নেই। দোকানতো বটে, পুরো রাস্তাজুড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ছুটছে। প্রত্যেকের টার্গেটই ঈদের কেনাকাটা। পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে নতুন কাপড় কিনতে সবাই ভিড় করছেন শাড়ি, থ্রিপিস, বাচ্চাদের পোশাক, পাঞ্জাবি, পায়জামা এবং টিশার্টসহ অন্যান্য পোশাকের দোকানগুলোতে।

এসব ক্রেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই নারী ও শিশু। মায়েদের হাত ধরে শিশুরা এসেছেন বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে। দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড়। দোকানদাররা কেউ কারোর সাথে কথা বলার পর্যন্ত সুযোগ পাচ্ছে না। ক্রেতাদের চাহিদা মতো পণ্য বিক্রি করছেন তারা।

শনিবার এইচএম রোডে কথা হয় মৌমিতা সুগন্ধা নামে এক তরুণীর সাথে। তিনি বলেন, আমার ভাইয়া ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। শুক্রবার ছুটিতে বাড়ি এসে বাজার করার জন্য টাকা দিয়েছেন। তাই আজ প্রথম আসলাম ছোটভাই ও বোনকে নিয়ে বাজার করতে। তবে এতো ভিড় হবে তা আগে বুঝতে পারিনি।
তিনি বলেন, বাজারের প্রতিটি দোকানে এমন ভিড় যে, দোকানদাররা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। তারপরও কষ্ট করে বাবার জন্য পাঞ্জাবি ও পায়জামার কাপড় এবং মায়ের জন্য একটি শাড়ি কিনেছি। ভাই ও বোনের জন্য কালেক্টরেট মার্কেট থেকে কেনাকাটা করবেন বলে জানান তিনি।

একই বাজারে কথা রাজিয়া সুলতানা মিম নামে আরেক তরুণীর সাথে। তিনি বলেন, বাবা সরকারি চাকরি করেন। তাই তিনি আজ ছুটির দিনে আমাদের সাথে নিয়ে বাজারে এসেছেন কেনাকাটা করতে। প্রতিটি দোকানেই বিভিন্ন পোশাক, স্টাইলিশ জামাকাপড়, জুতা, ব্যাগ এবং সাজসজ্জার নানা উপকরণে ভরে উঠেছে। তবে এসব জিনিসের দাম বেশি । তিনি বলেন, ঈদের বাজারে ভিড় বেশি দেখে দোকানিরাও তাদের ইচ্ছামতো দামদর হাকাচ্ছে। তারপরও কিছু করার নেই। ঈদ বলে কথা।

শুধু এইচএমএম রোড, কাপুড়িয়াপট্টি এলাকা নয়, শহরের কালেক্টরেট মার্কেট, জেস টাওয়ার, সিটিপ্লাজা, মুজিব সড়ক এলাকাতেও ক্রেতাদের ঢল নামে। কালেক্টরেট মার্কেটে প্রতিটি গলিতে মানুষের ভিড় এমন ছিলো যে, পায়ে হেঁটে চলাও দুস্কর।

ওই মার্কেটের কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে অন্য বছরের তুলনায় এবার আগেভাগেই বিক্রি শুরু হয়েছে। রোজার দ্বিতীয় দশক শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় থাকছে। তবে অধিকাংশ ক্রেতারাই রাতের তুলনায় দিনের বেলাতে কেনাকাটা করতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন বলে তারা জানান।

একই পরিস্থিতি ছিলো শহরের মুজিব সড়ক এলাকা অভিজাত শপিংমলগুলোতে। অভিজাত শপিং মল আড়ংয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর মানুষের ভিড়। ওই দোকানে বেশিরভাগই সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এমন ক্রেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। রাজিবুল হক নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদ আসলে তিনি আড়ং থেকে কেনাকাটা করেন। কারণ আড়ং ক্রেতাদের চাহিদার সাথে মিল খাইয়ে পোশাকের সংগ্রহ রাখে। তবে এবার প্রতিটি পোশাকের দাম আগের তুলনায় বেশি বলে তিনি জানান।

ওই শপিংমলের একজন নারী বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ঈদের সময় ছুটির দিনগুলোতে তাদের দোকানে বেশি ক্রেতার উপস্থিতি হয়। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এবার ঈদে ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন আইটেমের কালেকশন আছে।

টপটেন, সেইলর, লাল সবুজ রঙ, ইনফিনিটি, রিচম্যানসহ অন্যসব শপিংমলে শিশু, নারী এবং পুরুষদের জন্য নানান ডিজাইন ও মানের জামাকাপড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শপিং মল ও মার্কেটে শাড়ি, কুর্তা, পাঞ্জাবি-পায়জামা, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, ওয়ান পিস পাওয়া যাচ্ছে। আর বিভিন্ন দোকানে পুরুষের চেয়ে ভিড় বেশি জমাচ্ছেন নারী ক্রেতারা। যাদের অধিকাংশই নতুন পোশাক, গহনা, মেকআপ আইটেম এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী কিনছেন। শুক্রবার মাঝ রাত পর্যন্ত ছিল এই ভিড়।