একটি বাড়ি ও পুকুরের কারণে জলাবদ্ধ ৫০ একর জমি ৫ বছর ধরে

0

প্রদীপ বিশ্বাস, বাঘারপাড়া (যশোর)॥ বাঘারপাড়ায় একটি মাত্র পরিবারের বসতবাড়ির জন্যে প্রায় ৫০ একর আবাদি জমি ৫ বছর ধরে অনাবাদি রয়েছে। এতে বসতবাড়িসহ কয়েকশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর, ভাতুড়িয়া ও নলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।

আউশ-আমন ধান উৎপাদনে খ্যাত এ ফসলের মাঠটি দীর্ঘদিন অনাবাদি থাকায় সেখানে জন্মেছে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ। ইউনিয়নের নলডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে শিমুলের দ্বিতল বাড়ি নির্মাণ ও পুকুর খননের পর থেকেই এভাবে জলবন্দী হয়েছে এ এলাকা।

এ সমস্যা নিরসনে গত জানুয়ারি মাসে এলাকার ১১২জন কৃষক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে লিখিত আবেদন করেন।

জানা গেছে, রায়পুর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের নলডাঙ্গা-ভাতুড়িয়া গ্রামের মাঝের বিলটির নাম ‘সোনাকুড় বিল’। এ বিলের বর্ষা মৌসুমের পানি শিমুলের বাড়ির উত্তরে বাঘারপাড়া-খাজুরা সড়কের কালভার্ট দিয়ে দক্ষিণে জলেশ্বর বিল হয়ে চিত্রা নদীতে পড়তো। এরপর সেখানে রবি শস্যসহ আউশ ও আমন ধানের চাষ করতেন কৃষকরা। পরে সেচ প্রকল্প শুরু হলে এ মাঠে বিনা খরচে বোরো ধান ফলাতেন এলাকার কৃষক।

২০১৯ সালে শিমুল হোসেন কালভার্টের মুখে একটি দ্বিতল ভবন ও পূর্বপাশে একটি পুকুর খনন করেন। এ ভবন ও পুকুরের স্থান দিয়েই সে সময় পানি জলেশ্বর বিলে চলে যেত। বাড়ি ও পুকুর খননের পর থেকে এ ফসলের মাঠে পানি জমে যায়। চৈত্রের এ প্রখর রোদেও সেখানে দুই ফুট পানি থকে। নলডাঙ্গা, ভাতুড়িয়া ও রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ১২০ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে দীর্ঘদিন ফসল উৎপাদন করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন। কিন্তু আজো এ সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক এখানে মাছের ঘের করেছেন।

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক মসলেম উদ্দিনসহ (৭৭) কয়েকজন কৃষক জানালেন, এ জায়গায় এক সময় আমন ও আউশ ধান ভালো হতো। খুব বেশি পানি বা সার দেওয়া লাগতো না। নলডাঙ্গা গ্রামের শিমুল হোসেন যে বছর বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন তারপর থেকে আর কোনো ফসল হয়নি। তিনি আরও বলেন, শিমুলের বাড়ির উত্তর পাশে বাঘারপাড়া-খাজুরা সড়কের নিচে একটি কালভার্ট আছে। সেখান দিয়ে এ বিলের পানি জলেশ্বর বিল দিয়ে নেমে যেত। এখন কালভার্টের দক্ষিণ পাশে বাড়ি ও পুকুর হওয়ায় পানি আর নামতে পারছে না। তারপর দীর্ঘ ৫ বছর কেটে গেলেও কেউ সংস্কারে উদ্যোগ নেয়নি।

নলডাঙ্গা গ্রামের ফিরোজ হোসেন বলেন, আমার মাত্র ২বিঘা জমি। তাও এ মাঠে। অন্য মাঠে কোনো জমি না থাকায় আমি কোনো ফসল ফলাতে পারছি না। অর্থের অভাবে মাছের ঘেরও করতে পারছি না। এ বছর বাধ্য হয়ে হাটু পানিতে ধান লাগিয়েছি। যদি কিছু হয় তবে চাল কেনার হাত থেকে কিছুদিন রেহাই পাবো। তিনি আরও বলেন, বছরের প্রায় তিন মাস এলাকার ৩০টি বাড়ি পানির নিচে থাকে।

শিমুল হোসেনের বড় ভাই মাসুদ হোসেন বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সে তো এখন জীবিত নেই। এখন প্রশাসন যদি পাইপের মাধ্যমে আমাদের জমির নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করতে চায় তবে পরিবারের আপত্তি নেই।

রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর রশীদ স্বপন বলেন, সোনাকুড় বিলের পানির কারণে এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বেড়েছে তেমন দারিদ্র্যও বেড়েছে।

তিনি বলেন, আমি নিজেও উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিপুল ফারাজী ও সর্বশেষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আয়ূব উদ্যোগ নিয়েও এর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহান বলেন, বিলের জলাবদ্ধতা দূর করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

‘সোনাকুড়’ বিলের জলাবদ্ধতা বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন সরকার বলেন, কৃষকদের একটি আবেদন পেয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।