রমজানের আগেই বাজার অস্থির বাড়ছে মুরগি ও ডিমের দাম

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ মাহে রমজানকে সামনে রেখে যশোরে মুরগির দাম বাড়ছে। বাড়ছে ডিমের দামও। বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট অব্যাহত রয়েছে। গত মাসে দাম বাড়ার পর বিভিন্ন ধরনের ডালের দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে স্থিতিশীল রয়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম।

ভোক্তাদের অভিমত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোরালো পদক্ষেপ না নিলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা রোজায় ভোগান্তিতে পড়বেন। কৃষি কর্মকর্তা ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। গতকাল রোববার যশোর শহরের বড় বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

রমজানে বাড়তি চাহিদা থাকে মুরগির। সেই সুযোগটা নিচ্ছেন খামারিরা। এ সপ্তাহে খামারের ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির কেজিতে ১০ টাকা করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বড় বাজারে খুচরা বিক্রেতা গোলাম হোসেন জানান, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খামারের লাল মুরগির ডিমের দামও এ সপ্তাহে প্রতি পিসে ৫০ পয়সা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা। বড় বাজার কাঠেরপুলেও বিক্রেতারা প্রতি কেজি গরুর মাংসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করার পর আর দাম কমাননি।

বড় বাজারে এখনও বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট চলছে। এই সুযোগে প্রচুর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। সহজে খোলা সয়াবিন তেলের মান যাচাই করা যায় না বিধায় এতে পাম তেল ভেজাল দেওয়ার সুযোগ থাকে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে।

বড় বাজারে খুচরা ভোজ্যতেল বিক্রেতা রবি ব্যানার্জি জানান, তিনি খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৯২ টাকা, পাম তেল ১৬৩ টাকা, সুপার তেল ১৭০ টাকা ও সরিষার তেল ১৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি আশা করছেন বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের সরবরাহ প্রচুর থাকায় আসন্ন রমজানে দাম বাড়বে না।

এদিকে বাজারে সব ধরনের ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। চিকন দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১১০ টাকা, মটর ডাল ১৪০ টাকা, ছোলার ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ৬৫ টাকা ও ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারের ‘আয়াশ স্টোর’ এর স্বত্বাধিকারী কামাল আহমেদ জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের বাড়তি বিক্রি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তিনি ডালের দাম আর বাড়বে না বলে আশা করছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পর্যাপ্ত ফলন হওয়ায় বাজারে সবজির প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। দামও বেশ খানিকটা কম। তবে গ্রীষ্মকালীন নতুন কিছু সবজি উঠেছে তার দাম বেশি। বড় বাজারে খুচরা সবজি বিক্রেতা মজনু ব্যাপারি জানান, তিনি গ্রীষ্মকালীন সবজি করোলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পটল ১০০ টাকা ও সজনে ডাটা ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। খুচরা বিক্রেতা অসিত সাহা জানান, তিনি প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা ও একসাথে ৬ কেজি আলু নিলে ১০০ টাকা, ভাতি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা, আদা ১০০/১২০ টাকা ও কাঁচা রসুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আড়তদার ‘নিতাই গৌর ভাণ্ডার’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী নিতাই সাহা জানান, বাজারে গ্রীষ্মকালীন নতুন ভাতি পেঁয়াজ উঠেছে। তিনি আশা করছেন রমজানে আলু ও পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক থাকবে।

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটকে কৃত্রিম বলে ক্রেতা যশোর পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান হিমু মনে করেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,বাজার তদারকি সংস্থাগুলো যদি ব্যবসায়ীদের গুদামে অভিযান চালায় তাহলে আসল চিত্র বেরিয়ে আসবে। তিনি মনে করেন কোম্পানিরা বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে উৎপাদন কমিয়ে বাজারে সংকট সৃষ্টি করছেন। এই সুযোগে দোকানিরা বাজারে মানহীন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের যাতে কষ্টের মধ্যে পড়তে না হয় সেজন্য অবিলম্বে বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে রমজানের আগেই আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।

অবশ্য এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদফতর যশোরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা লোকসমাজকে জানান, তারা রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি কৃষিপণ্যের সকল ব্যবসায়ী ও দোকানিকে চিঠি দিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। ইস্যু করা চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অযৌক্তিভাবে কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে, কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ, উপস্থাপন ও সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে তাদের কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ ও কৃষি বিপণন বিধিমালা ২০২১ এর বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এছাড়া তারা প্রতি দোকানে এ সংবলিত লিফলেট বিতরণ করবেন। এরপরও তারা না মানলে জরিমানা করা হবে।