যশোর পৌরসভায় টিসিবির স্মাার্টকার্ড বিতরণকালে বিশৃঙ্খলা

প্রথম তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ২১২৯ জন

0

তহীদ মনি॥ যশোর পৌরসভার আওতায় টিসিবির স্মার্ট কার্ড বিতরণে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। গতকাল বুধবার কার্ড বিতরণকালে কাউন্টার থেকে কাউন্টারে ঘুরে কার্ড না পাওয়া নাগরিকরা বিশৃঙ্খলা করেন। এছাড়াও প্রথম তালিকা থেকে বাদ পড়া দুই হাজার কার্ডধারী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

পৌরসভায় কার্ড নিতে আসা নাগরিকরা জানিয়েছেন, যারা আগে কার্ডধারী ছিলেন তাদের অনেকেই স্মার্ট কার্ড পাচ্ছেন না। আবার এক সিরিয়ালের কার্ড অন্যকাউন্টারে খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হয়েছে। নমিনির কাগজপত্রসহ সর্বশেষ যে তালিকা পৌরসভার পক্ষ থেকে টিসিবি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছিল সেই তালিকার অনেকেই কার্ড পাননি। আবার যাদের তথ্য পাঠানো হয়নি তাদের কেউ কেউ কার্ড পাওয়ায় ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টিসিবি কার্ডধারীদের ভিড় ছিল পৌররসভা চত্বরে। অনেকেই সাবেক কাউন্সিলরদের উপরও দোষ চাপাতেও বাদ যাননি। প্রথম তালিকা থেকে বাদ পড়া ২ হাজার ১২৯ জনও নতুন করে কার্ড চাইতে আসায় যেমন সমস্যা সৃষ্টি হয় তেমনি চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকার পরও কার্ড না পাওয়া নাগরিকরা হতাশায় পড়েছেন। অবশ্য পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছন দুই দফায় কার্ড এসেছে হয়তো আরো আসবে তখন হয়তো এই সমস্যা থাকবে না।

গত প্রায় দুই বছর পৌরসভার মাধ্যমে টিসিবি কার্র্ড পেয়ে মাসে একবার সরকার নির্ধারিত মূল্যে টিসিবির মালামাল পাচ্ছিলেন কার্ডধারীরা। মাসে একবার তেল, চিনি, ডাল পরবর্তীতে যুক্ত হয় ৫ কেজি চাল এবং রোযায় যুক্ত হয়েছিল ছোলা ও খেজুর। তবে গত এক বছর যাবত গ্রাহকরা চিনি পাননি, খেজুর আসে শোনা যায়, সেটিও গ্রাকরা পান না, তেল নিয়েও অভিযোগ ছিল গ্রাহকদের।

রোযা সমাগত, সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে আবারো টিসিবির মাল পাওয়া যাবে তবে স্মার্ট কার্ডধারীরাই এটা পাবেন। কিছুটা সাশ্রয়ের আশায় অনেকেই কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির মাল কিনতে আগ্রহী। অতীতে দলীয় ডিলারদের খামখেয়ালিপনা, ওজনে কম দেয়া, মালের মান খারাপ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে বর্তমান সরকারের সময় সেই আশায় মানুষ টিসিবির কার্ড পেতে বেশি আগ্রহী। দিয়েছেন লম্বা লাইনও।

দুই দিন আগে পৌরসভা থেকে মাইকিং করে জানানো হয়েছিল ১ নং ওয়ার্ডের কার্ডাধারীরা বুধবার স্মাার্ট কার্ড পাবেন। এনআইডির ফটোকপি ও পুরোনো কার্ড নিয়েগেলে পাবেন নতুন ফ্যামিলি কার্ড। ঘোষণা মতে সকাল থেকেই কার্ড পেতে ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পৌরসভার নির্দিষ্ট কাউন্টারে গিয়ে কার্ড তোলার চেষ্টা করেন। এ সময় অনেকের কার্ড না পাওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

বারান্দিপাড়ার খোদেজা, রিনা, নূর মোহাম্মদ, গোলাম মোস্তফার মতো অনেকেই জানান, তারা আগে কার্ডধারী ছিলেন, টিসিবির মাল তুলতেন কিন্তু এখন তাদের কার্ড নেই। স্বজন প্রীতি আর ‘এর কার্ড তাকে তার কার্ড আর একজনকে দেয়ায়’ এই সব সমস্যা হয়েছে।

এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু জানান, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার ৩৫৬ টি প্রাথমিক কার্ড দেয়া হয়েছিল। ৬/৭ মাস আগে স্মার্ট কার্ডের ঘোষণা আসলে নমিনির কাগজপত্রসহ এনআইডি চাওয়া হয় সংশ্লিষ্টদের কাছে। সে হিসেবে ১০ হাজার ২২৭ জনের কাছ থেকে প্রকৃত কাগজপত্র পাওয়া যায়। সেখানে তালিকা থেকে এক প্রকার বাদ যায় দুই হাজার ১২৯ জন। আবার প্রাপ্ত কাগজের ভিত্তিতে ১০ হাজার ২২৭ জনের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে টিসিবির ওয়েবসাইটে আপলোড দেয়া হয়। সম্প্রতি দুই দফায় পৌরসভায় ১০ হাজার ৪৪৮টি কার্ড আসে। সে হিসেবে আপলোড দেয়া কার্ডের সংখ্যার চেয়ে ২২১টি কার্ড বেশি পেয়েছেন তারা। তবে যাদের আপডেট তালিকা দেয়া হয়নি তাদের অনেকের যেমন কার্ড এসেছে তেমনি সর্বশেষ তথ্যসহ আপলোড দেয়া অনেকের কার্ডই তারা পাননি।

উদাহরণ হিসেবে পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১নং ওয়ার্ডে প্রাথমিক কার্ডধারী ছিলেন ১৫৭৯ জন, কাগজপত্র পাওয়ার পর আপলোড দেয়া হয় ১৩১৭জনের কিন্তু কার্ড এসেছে ১৩৮০টি। তেমনি ৩ নং ওয়ার্ডে প্রাথমিক কার্ডধারী ছিলেন ১১১৮জন, সার্ভারে আপলোড দেয়া হয় ১০০৩ জনের কিন্তু কার্ড পাওয়াগেছে মাত্র ৮৮৮টি। এভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উত্তম কুমার আরো জানান, তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে টিসিবি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে, তারা পাচ্ছেন, বিলির উদ্যোগ নিয়েছেন। এর বাইরে তাদের কিছু করার নেই।

পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, তাদের কাছে ১০ হাজার ৪৪৮টি ফ্যামিলি কার্ড থাকলেও ডিলারদের মাধমে খবর পেয়েছেন এখনো পর্যন্ত রোযা উপলক্ষে পৌরসভার জন্যে ৭ হাজার ৭২৬ টি কার্ডের মালামাল বরাদ্দ হয়েছে। ওই সূত্র মতে, সমস্যার সমাধান না হলে প্রথম চালানের মালামাল তারা ডিলারদের ছাড় করাতে দেবেন না, তাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে উঠবে।

পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, সব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা আশা করছি কার্ড আরো আসবে এবং মালামালের সমস্যারও সমাধান হবে। সিরিয়ালের সমস্যাও একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে এ দিনের বিশৃঙ্খলা ও ক্ষোভকে তিনি অনাকাক্সিক্ষত বলেও জানান।