খোলা সয়াবিন তেলের কেজিতে বিক্রেতা বাড়তি নিচ্ছে ২০ টাকা

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ রমজান মাসের আর ১০ দিন বাকি থাকলেও বাজারে এখনও বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট কমেনি। বরং সরকার নির্ধারিত মূল্য্যের চেয়ে কেজিতে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা বেশি নিয়ে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল।

এদিকে, এ সপ্তাহে চাল, ডাল ও মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কমেছে ডিম ও খামারের মুরগির দাম। সহজলভ্য দামে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের সবজি। ভোক্তারা সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোকে রোজার আগেই বাজার নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রোববার যশোরের বড় বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো সরকারের কাছ থেকে আরও মূল্য বাড়ানোর উদ্দেশে উৎপাদন কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ খোলা সয়াবিন তেল সরবরাহ রয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর সরকার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের ৮ টাকা বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ১৭৫ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা দাম নির্ধারণ করে। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের অভাবে দোকানিরা খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন।

বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়,খোলা সয়াবিন তেলের কেজি খুচরো পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা। সরকার নির্ধারিত খুচরো পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের লিটারের মূল্য ১৫৭ টাকা। লিটার থেকে কেজির পার্থক্য ১শ গ্রাম। বাড়তি ১শ গ্রাম তেলের দাম ১৯ টাকা ৫০ পয়সা পড়লে প্রতি কেজি খোলা তেলের দাম পড়ে ১৭৫ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ প্রতি কেজিতে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা বেশি নিয়ে খুচরো পর্যায়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১৯৫ টাকা।

যশোরে পাইকারি সয়াবিন তেলের ব্যবসায়ী ‘মিরপুর কুন্ডুু অয়েল মিল’ এর স্বত্বাধিকারী রবিন কুণ্ডু এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি রোববার পাইকারি মূল্যে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করেছেন ১৮৯ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ পাইকারি ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি কেজি বেশি নিচ্ছেন ১৩ টাকা ৭০ পয়সা। বড় বাজারে খুচরো ব্যবসায়ীরা ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বেশি নিচ্ছেন ৫ টাকা ৮০ পয়সা। সেক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি কেজিতে মোট বেশি নেওয়া হচ্ছে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী তরল পদার্থ লিটারে বিক্রি করতে হবে, সেখানে সয়াবিন তেল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে কেন, জানতে চাইলে রবিন কুণ্ডু জানান, বাজারে কেজি ছাড়া লিটারের পরিমাপক পাওয়া যায় না।

এদিকে এ সপ্তাহে বড় বাজারে চাল, ডাল ও মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রোববার বাংলামতি চাল মানভেদে ৮০ থেকে ৮৬ টাকা, মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭৪ টাকা, সুবললতা ৭২ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, বিআর-৬৩ চাল ৭২ থেকে ৭৪ টাকা, স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও হীরা চাল ৪৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

যশোর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার বিশ্বাস বলেন, তিনি আশা করছেন যেভাবে চাল আমদানি হচ্ছে তাতে করে রমজানে দামে প্রভাব পড়বে না।

এছাড়া বাজারে চিকন দানার মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১১৫ টাকা, ছোলার ডাল ১৩০ টাকা, মটরডাল ১৪০ টাকা ও বুটের ডাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে বড় বাজার কাঠেরপুলের গরুর মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা।

তবে এ সপ্তাহে খামারের সোনালি মুরগির কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ২৯০ টাকা এবং খামারের লাল ডিম প্রতি পিস ৫০ পয়সা কমে বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা।

এবার প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় খুব ভালো ফলন হয়েছে শীতকালীন সবজির। বাজারে দামও যথেষ্ট নাগালের মধ্যে। এদিন টমেটো প্রতি কেজি ১০ টাকা, ওলকপি ১০ টাকা,ফুলকপি ১০ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা, গাজর ২০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, মটরশূঁটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বড় বাজারে কাঁচামালের আড়তদার ‘মনিরামপুর ভান্ডার’ এর মো. আলাউদ্দিন জানান, তিনি আশা করছেন সামনে রমজান মাসে সবজির দাম বাড়বে না। তাছাড়া রোজার মধ্যেই গ্রীষ্মকালীন সবজিও বাজারে উঠে যাবে।

বাজারে ক্রেতা সাগর সরদার এ প্রতিবেদককে বলেন, বোতলজাত তেলের কৃত্রিম সংকটে লাভবান হচ্ছেন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রেতারা। প্রতি কেজিতে তারা ২০ টাকা বেশি মুনাফা করছেন। তিনি রোজার আগে বাজার তদরাকি জোরদার করার আহ্বান জানান।

খোলা সয়াবিন তেল সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বড় বাজারে অস্বাভাবিক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীম রোববার লোকসমাজকে বলেন,‘ আমি আজই বাজারে অভিযানে নামবো।’

তিনি আরও জানান,যাতে রমজানে ভোক্তাদের বাড়তি চাপে না পড়তে হয় সেজন্য বাজার তদারকি আরও জোরদার করা হবে।