যশোরে জামায়াত ইসলামীর সুধী সমাবেশ, তরুণদের হাতেই এ দেশ তুলে দিতে চাই : ডা. শফিকুর

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা তরুণদের রক্তের ঋণ শোধ করতে বদ্ধপরিকর। আগামীর বাংলাদেশ তরুণরাই পরিচালনা করবে। তরুণদের হাতেই এ দেশ তুলে দিতে চাই। তাদের ফ্রেশ ব্লাড। তারা দেশ গঠন করুক। আমরা তাদের পরামর্শ দেবো।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদীরা পালিয়েও দেশকে শান্তি দিচ্ছে না। বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জাতীয় স্বার্থে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এই ক্ষেত্রে কোনো দল নেই, মেজরেটি-মাইনরেটি নেই। দেশের এ বিভক্তি আওয়ামী লীগের সৃষ্টি।
বুধবার রাতে যশোর শহরের একটি হোটেলে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে একথা বলেন তিনি। সুধি সমাবেশে জামায়াত আমির বলেন, পূর্ববর্তী সরকার স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের নামে জাতিকে বিভক্ত করে রেখেছিল। তারা নাকি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। এখন ভারতে বসে আছেন। সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বরকে তাদের বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে টুইট করছেন। সেখানে বাংলাদেশ বলে কোনো কথা নেই। আমরা প্রতিবাদ করেছি। চেতনাবাজ বুদ্ধিজীবীরা একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। অথচ তাদের এতো চেতনা!
ডা. শফিকুর আরও বলেন, এই যশোরকে আমরা আলাদা দৃষ্টিতে দেখি। দেশ স্বাধীনের পর যখন প্রতিবেশিরা খাদ্যগুদাম লুট করছিল, যখন ঢাকা থেকে সব আর্মস, মিলিটারি ভেহিকেলস নিয়ে যাচ্ছিল, তখন এই যশোর থেকেই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। স্বাধীনতার ৫৩ বছনে গুলির একটা খোসাও ফেরত দেয়নি প্রতিবেশিরা। আমাদের পদ্মা নদীকে হত্যা করেছে। পদ্মার অববাহিকা মরুভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। কী অন্যায় আমাদের? আসলে আমরা স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারিনি। সেই মূল্য এখনও আমাদের শোধ করতে হচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের লিগ্যাসি বিগত সাড়ে ১৫ বছর লুটপাট করে বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তারা খালি করে দিয়েছে।’
‘জোড়াতালি দিয়ে কিছু হবে না’ মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, সমাজের বোন মেরুতে হাত দিতে হবে। নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যার জন্য রক্ত দিয়েছে আবু সাইদ, মুগ্ধরা। সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল আমাদের ভাইবোনেরা। সেই আন্দোলনকে ব্রুটালি দমন করতে গিয়ে সরকার নিজের পতন ডেকে এনেছে।
আওয়ামী সরকারের দুই শীর্ষনেতার প্রতি ইঙ্গিত করে ডা. শফিক বলেন, ‘তারা নাকি পালিয়ে যাবেন না। গর্ব করে বলতেন তিনি পালাবেন না। আরেকজন বলতেন, কোথায় পালাবো? আপনার বাড়িতে উঠবো। আসলে তারা জাতির সাথে মশকরা করতেন।
সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা শাখার আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন।
বিশেষ অতিথির আলোচনায় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। উই ওয়ান্ট জাস্টিসÑ এটাই ছিল সেই আন্দোলনের মূলমন্ত্র। কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ছাত্রজনতার সেই আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ গড়তে লড়াই করছে। এর জন্য ছাড় দিয়ে হলেও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আদ-দ্বীনের চেয়ারম্যান ডা. শেখ মহিউদ্দিন, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আহসান হাবিব, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মোর্তুজা ছোট, প্রাচ্যসংঘের প্রতিষ্ঠাতা বেনজীন খান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ প্রমুখ।
আগামী ২৭ ডিসেম্বর জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে কর্মিসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেবেন।