সরিষা ফুলের হলুদ আভায় শোভিত পৌষের প্রকৃতি

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে যশোরের রূপ। পৌষের বিন্দু বিন্দু শিশির ভেজা মাঠভরা সরিষা ফুলের মৌ-মৌ সুঘ্রাণ ও সৌরভ চারদিকে শোভা পাচ্ছে। সবুজ গাছের হলুদ ফুল শিশির ভেজা শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকমিক করছে। যেন প্রকৃতি সেজেছে হলুদবরণ সাজে। হলুদ রঙের আভার সাথে বাতাসে ভাসছে মৌ মৌ গন্ধ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৮ উপজেলার ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে সরিষা। তবে গত বছরের চেয়ে দুই হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে। এর কারণ হিসেবে কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর যশোরাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলার নিম্ন অঞ্চল অভয়নগর, কেশবপুর, মণিরামপুর উপজেলার নিচু এলাকায় সরিষার আবাদ হয়নি। অথচ গত বছর এসব উপজেলা রেকর্ড জমিতে সরিষা আবাদ হয়। তবে এসব উপজেলার উচু জমিতে হলুদে হলুদে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে এখন কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে গত কয়েক বছর ধরে যশোরে বাড়ছে সরিষার আবাদ। বিশেষ করে ধান আবাদে প্রায়ই লোকসান হওয়ায় চাষে সাশ্রয়ী খরচ সরিষা চাষে দিন দিন কৃষক ঝুঁকছেন। জেলার কয়েকটি উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে সরিষা আবাদ কম হওয়া সত্ত্বেও এ বছর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষা। কৃষকদের দাবি অন্যান্য ফসলের অপেক্ষা সরিষা আবাদ লাভজনক হওয়ায় তারা এখন বেশি বেশি সরিষা আবাদ করছেন।
জেলার মণিরামপুর উপজেলার বেগারীতলা এলাকার চাষি গোলাম রসুল বলেন, আমাদের এলাকার অনেক চাষিই এখন ধান আবাদ ছেড়ে সরিষা আবাদ করছেন। কারণ ধান চাষে যে হারে খরচ হয় সেইভাবে সরিষা আবাদে তেমন একটা খরচ নেই। তাছাড়া পতিত জমিতেও সরিষা আবাদ করা সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এ মৌসুমের জেলায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এবছর জেলায় অনেকগুলো উন্নত জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১ হাজার ৩৬০ কেজি (১.৩৬ টন)। বর্তমান বাজার মূল্য মণপ্রতি ৩ হাজারের অধিক। ফলে সরিষার আবাদে কৃষকের ভাগ্যে খুলবে বলে কৃষি বিভাগ মনে করছে।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাছান আলী বলেন, বোরো ধান রোপণের আগেই কম সময়ে একটি বাড়তি ফসল আবাদ করতে কৃষকদের কৃষি বিভাগ আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে জেলার চাষিরা সরিষা আবাদ করে ভালো ফলনের আশা করছেন। তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষার বীজ রোপণের মাত্র ৮০-৯০ দিনের মধ্যে সরিষা গাছ তুলে ফেলা যায়। বিঘা প্রতি সরিষা চাষে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। বৈরী আবহাওয়া না হলে এই ফসলের ফলন বিঘা প্রতি ৫-৬ মণ সরিষা বীজ পাওয়া যায়। যা খরচের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি সম্ভব বলে জানান।
এবছর কৃষকদের কাছে সরিষার নতুন জাত বীনা- ১৪ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই জাতের সরিষা বীজ বপণে জমি চাষ করতে হয় না। এছাড়া আমন কাটার আগে এই জাতের সরিষা বীজ বপণ করলে দ্রুতই সরিষার চারা গজায়। ফলে বীনা- ১৪ সরিষা চাষে কৃষকের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাঘারপাড়ার রায়পুর গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরিষার এমন কিছু জাত আছে যা খুবই উচ্চ ফলনশীল। চাষে তেমন খরচ হয় না। এরমধ্যে বীনা ১৪ জাতের সরিষা খুব জনপ্রিয়। তাদের এলাকায় অনেক চাষিই এখন বীনা সরিষা-১৪ চাষ করে লাভের আশা দেখছে বলে তিনি জানান।