লোকসমাজ ডেস্ক।। মহান বিজয় দিবসে সোমবার বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ উচ্চারিত হয়েছে দেশ জুড়ে। বর্ণিল আয়োজনে সারা দেশে পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচি। সকালে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় দিবসের কর্মসূচি। দিনভর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে স্মৃতি স্তম্ভ ও শহীদ মিনারে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জনতা।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্রর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রথমে শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট। এর পরে সকাল ৭টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধান উপদেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা। তখন বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাদের সালাম জানান।
পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনভর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়সহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

যশোর : যশোরে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচিতে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। সোমবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের শুভ সূচনা হয়। এ বার যশোরের মণিহার এলাকায় বিজয় স্তম্ভে এই তোপধ্বনির আয়োজন করা হয়। শুরুতে বিজয়স্তম্ভে একাত্তরের বীর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদসহ পুলিশ কর্মকর্তারা। শ্রদ্ধা নিবেদনের একপর্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করেন পুলিশ সদস্যরা।

এরপর বিজয়স্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুযহারুল ইসলাম মন্টু, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বিপ্লবী যুব মৈত্রী, যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, আনসার বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
এছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেছে যশোর জেলা বিএনপি। আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

দিনের অন্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল যশোর টাউনহল ময়দানে গ্রামীণ খেলাধূলার আয়োজন, বিজয় মেলার আয়োজন, আলোচনাসভা, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণ।
চৌগাছা : বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। উপজেলায় জগন্নাথপুর মুক্তিনগর শহীদ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয মাঠে অবস্থিত শহীদ বেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। প্রথমে উপজেলা প্রশাসন তরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পর্যায়ক্রমে থানা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।

বাগআঁচড়া : যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সোমবার সকালে বাগআঁচড়া, কায়বা,শংকরপুর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে একটি শোভাযাত্রা হাইস্কুল মাঠ থেকে শুরু হয়ে বাজারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিন করে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
অপারদিকে, বাগআঁচড়া ও কায়বা ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে সাতমাইল গরু হাট থেকে একটি শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বাগআঁচড়া বাজারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সুর্যদয়ের সাথে সাথে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে কর্মসূচির সুচনা করা হয়।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পন করা হয়। রাষ্ট্রের পক্ষে প্রথমে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল, পরে পুলিশ সুপার মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, বে-সরকারি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পমাল্য অর্পন করা হয়।
এ ছাড়াও কুচকাওয়াজ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসুচিরর আয়োজন করা হয়েছে।
শালিখা : ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। সরকারি বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮ টায় উপজেলার তালখড়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাহ্জলি অর্পণ করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ ৷

উপজেলা মিলনায়তনে মুক্তি মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ ৷ বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আলমগীর হোসেন, ওসি ওলি মিয়া, সমাজ সেবা অফিসার নাসিমা খাতুন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিচুর রহমান মিল্টন, সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান চকলেট, মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল, কেনায়েত হোসেন, শালিখা প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, ছাত্র প্রতিনিধি ফারহান ইসলাম শাকিল৷ ।অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাডেমিক সুপারভাইজার বিপ্লব কুমার রায়৷। এরপর আড়পাড়া সরকারি আইডিয়াল মাঠ প্রাঙ্গনে বিজয় মেলার উদ্বোধন করা হয় ৷ দুপুরে সকল উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়।

বাগেরহাট : বাগেরহাটে নানা আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা হয় ।সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের দশানীস্থ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসানসহ কর্মকর্তারা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে গার্ড অব অনার প্রদান এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সকল শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয় । এরপর জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সিভিল সার্জন, বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, শিক্ষা প্রকৌশল, বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি, সরকারি পিসি কলেজ,বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পন করে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে দশানীস্থ স্মৃতিস্তম্ভে।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় যথাযোগ্য মর্যদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। সোমবার সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হাসান চত্বরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের সূচনা করা হয়। সকাল ৭টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সামনের মুক্তমঞ্চে চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের বিজয় মেলা উদ্বোধন করা হয়। মেলার উদ্বোধন ও সালাম গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা। এ সময় আরো উপস্থি’ত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তার,অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন কুমার রাজবংশী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) রিয়াজুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক আসলাম হোসেন, সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলাম, মুক্ত সংগঠক সজিবুল ইসলাম ও মুখপাত্র তামান্না বিশ্বাস প্রমুখ।

এ দিবসকে কেন্দ্র করে আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।





