মিঠুন চক্রবর্তীর ‘মুসলমান-বিরোধী’ বক্তব্যের জেরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বলিউডের একসময়কার সুপারস্টার ও বর্তমানে বিজেপির নেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কলকাতা ও লাগোয়া সল্ট লেক পুলিশের কাছে এখনও পর্যন্ত তিনটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কয়েকদিন আগে বিজেপির দলীয় সভায় তিনি এক ভাষণে “কেটে মাটিতে পুঁতে’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
কাদের কেটে ফেলার কথা বলেছিলেন, তা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি, তবেই ওই বাক্যটির ঠিক আগের বাক্যেই মি. চক্রবর্তী হিন্দু-মুসলমানদের কথা বলছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস বলছে এটি নিশ্চিতভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উদ্দেশে বলা এবং মানুষকে হত্যায় ইন্ধন জোগানো।
তবে বিজেপি বলছে লোকসভা নির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদ জেলার এক তৃণমূল নেতা হিন্দু-মুসলমানদের সংখ্যার কথা টেনে এনে ‘কেটে ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেব’ – এরকম মন্তব্য করেছিলেন। এখন মিঠুন চক্রবর্তী সেই কথার সূত্র ধরেই পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তার ওই বক্তব্যকে বিজেপি ‘ঘৃণা-ভাষণ’ বলে মনে করে না।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গত সপ্তাহে সদস্য-সংগ্রহ অভিযানের অনুষ্ঠানে মিঠুন চক্রবর্তী ওই ভাষণ দিয়েছিলেন।
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার ইউটিউব চ্যানেলে পুরো অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং রয়েছে।
মিঠুন চক্রবর্তীর ভাষণের বিরুদ্ধে সোমবার দুটি এফআইআর দায়ের হয়েছে আর মঙ্গলবার কলকাতার একটি থানায় স্থানীয় বাসিন্দারা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
কী বলেছিলেন মিঠুন?
নিজের ভাষণে মিঠুন চক্রবর্তী বিগত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে দলের খারাপ ফলাফল নিয়ে বলতে শুরু করেছিলেন। এরপরেই তিনি বলেন যে “২৬-এ গদি আমাদের হবে.. যা কিছু করতে হোক তার জন্য, আমরা করব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনেই বলছি– যা কিছু করতে হোক। এই যা কিছু করার মধ্যে অনেক অর্থ লুকিয়ে থাকতে পারে।”
পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬ সালে নির্ধারিত আছে। মি. চক্রবর্তী ‘২৬-এ গদি’ বলতে সেই ভোটে বিজেপির ক্ষমতায় আসার কথা বলেছেন বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।
এরপরেই মি. চক্রবর্তী কোনও প্রসঙ্গ বা কারও নাম উল্লেখ না করেই বলতে থাকেন, “দেখুন, আমাদের এখানে এক নেতা বললেন আমরা ৭০% মুসলমান, ৩০% হিন্দু.. এদের কেটে ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেব। ভেবেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলবেন, যে এ ধরনের কথা বলো না। কেউ কিছু বলল না।”
“কিন্তু আমি তো মুখ্যমন্ত্রী নই। আমি তো বলবই… তুমি কেটে ভাগীরথীতে ফেলে দেবে কিন্তু এমন একদিন তো আসবে যেদিন আমরা তোমাদের কেটে ভাগীরথীতে নয়– ভাগীরথী আমাদের মা .. পুণ্য মা। তোমাদের মাটির ভেতরেই ফেলে দেব..” বলেছেন মিঠুন চক্রবর্তী।
এই সময়ে উপস্থিত জনতার উল্লাস শোনা যায় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটু হাসতে দেখা গেছে।
ভাষণের পরের অংশে মি. চক্রবর্তী দলের প্রচারে তার অংশ নেওয়া, সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য স্থির করা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন।
মি. চক্রবর্তী নাম না করলেও মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা হুমায়ুন কবীর এরকমই একটা ভাষণ দিয়েছিলেন লোকসভা নির্বাচনের আগে। বিজেপি দাবি করছে তখনই নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি অভিযোগ আকারে জানানো হয়েছিল।
তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলছেন, “মিঠুন চক্রবর্তী আমাদের বাঙালিদের কাছে নিশ্চিতভাবেই একটা আবেগের জায়গা। সেই মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।”
“কিন্তু রাজনীতিবিদ মিঠুন চক্রবর্তী যে কুৎসিত-তম বক্তব্য রেখেছেন সেটা তো মানুষকে হত্যায় ইন্ধন দেওয়ার শামিল। সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন। ভারতের নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা অনুযায়ী এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রণিধান রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বক্তব্য নিয়ে এফআইআর হয়েছে,” বলছিলেন মি. চক্রবর্তী।
তিনি আরও বলছিলেন, “বাংলার সংখ্যালঘু মানুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।”
‘ঘৃণা-ভাষণ তো নয় এটা’
দলের নেতা ও অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর ভাষণকে অবশ্য ‘ঘৃণামূলক ভাষণ’ বা উস্কানিমূলক ভাষণ বলে মনে করে না বিজেপি।
দলটির অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চ্যাটার্জীর কথায়, “এটাকে আমরা হেট-স্পিচ বলে মনেই করছি না। যে রাজ্যে ভোটে কোনও একটি দল পরাজিত হওয়ার পরে বিরোধী দলের ৫১ জনকে খুন করা হয়, সেই দলের সদস্য-সমর্থকদের মনোবল বাড়ানোর জন্য যা বলা উচিত মিঠুন চক্রবর্তী ঠিক তাই-ই বলেছেন। তার কথার আসল অর্থ হলো রাজ্যের এই অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে হবে।”
“তার বিরুদ্ধে যতই এফআইআর করা হোক না কেন, আমরাও আইনের দ্বারস্থ হবো। দল মিঠুন চক্রবর্তীর এই বক্তব্যকে ১০০ শতাংশ সমর্থন করে। নিচুতলার কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য, লড়াইয়ের ময়দানে নামার জন্য তিনি বলেছেন, বুক চিতিয়ে লড়তে হবে, গুলি খেতে হবে, তারপরেও এই সরকারকে হারাতে হবে,” বলছিলেন মি. চ্যাটার্জী।
তিনি প্রশ্ন তুলছিলেন যে মিঠুন চক্রবর্তীর ভাষণ নিয়ে যদি কথা হয়, তাহলে হুমায়ুন কবীর ভোটের আগে যে কথা বলেছিলেন, সেটা কেন ‘ঘৃণা-মূলক ভাষণ’ হবে না?
“মিঠুন চক্রবর্তীর ভাষণ তো সেই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া!” বলছিলেন জগন্নাথ চ্যাটার্জী।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা হুমায়ূন কবীরের সেই ভাষণ নিয়ে নির্বাচন কমিশন তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল।