যোগ্যতা ছাড়াই অধ্যক্ষ স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন আজও বহাল

0

স্টাফ রিপোর্টার || নেই শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, স্নাতকোত্তর তৃতীয় শ্রেণি অথচ কলেজের অধ্যক্ষের পদ আঁকড়ে আছেন যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন। ক্ষমতার দাপট ও ষোলআনা জালজালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া যশোর সদরের ইছালী মডেল কলেজের এ অধ্যক্ষ আদালতের সিদ্ধান্তকেও করছেন অবমাননা। কলেজের মূল অধ্যক্ষ আহম্মদ আলীকে দায়িত্ব না দিয়ে দখলে রেখেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠালগ্নের প্রভাষক রসমী আরা খাতুনের বিরুদ্ধেও করছেন নানা ষড়যন্ত্র।

ভুক্তভোগী আহম্মদ আলী এবং রসমী আরা খাতুনের অভিযোগ থেকে জানা গেছে নূরে আলম সিদ্দিকী মিলনের জালজালিয়াতির তথ্য।

আহম্মদ আলী জানান, ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন তিনি। ওই বছরের ২২ এপ্রিল যশোর সরকারি মহিলা কলেজে ডিজির প্রতিনিধি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মো. আবু মুসার দপ্তরে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫ জনের মধ্যে প্রথম হন। কলেজ পরিচালনা কমিটি ওই বছরের  ২৪ এপ্রিল তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। পর দিন ২৫ এপ্রিল কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শহিদুল হক স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র পান।

কিন্ত যোগদানের আগেই শহিদুল হককে সরিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় কলেজের সভাপতি হন। আটকে যায় তার নিয়োগ।  ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অবৈধ নিয়োগ এবং তার সীমাহীন অবৈধ কার্যক্রম বুঝতে পেরে সভাপতি নিজেই পদত্যাগ করেন। পরে স্থানীয় আজিজুল হককে সভাপতি করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্ত আহম্মদ আলী অধ্যক্ষ পদে যোগদান করতে গেলে সভাপতি আজিজুল তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বিএনপি, জামায়াতের কোনো লোককে এই প্রতিষ্ঠান প্রধান করতে পারবো না। আমরা নিজ দলের লোককে ওই পদে নিয়োগ করবো।

এর আগে রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন অধ্যক্ষ হওয়ার লোভে প্রথমে কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনকে জীবননাশের হুমকি দেন। এরপর থেকে আর কোনদিন প্রাণের ভয়ে আলতাফ হোসেন কলেজে যাননি। এই সুযোগে নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করেন। এর তিনি অতি গোপনীয়ভাবে অবৈধ ভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন।

এদিকে বৈধভাবে আহম্মদ আলীকে অধ্যক্ষ নিয়োগ করার পরও  ক্ষমতার অপব্যবহার করে কয়েক দিনের মধ্যে কলেজের নাম পরিবর্তন করে ইছালী মডেল কলেজে রূপান্তর করে ২৭/১০/ ২০০৯ তারিখে দৈনিক গ্রামের কাগজ পত্রিকায় অধ্যক্ষসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে আহম্মদ আলী যশোরের একটি আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত উভয় পক্ষে শুনানি শেষে ওই কলেজের সকল নিয়োগের ওপর স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। ওই দিন নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন আদালত চত্বরে তার দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে আহম্মদ আলীকে হত্যার হুমকি দেন। এ ঘটনায় তিনি প্রাণ বাঁচাতে কোতয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

আদালতের নির্দেশ অদ্যাবধি বলবৎ থাকা অবস্থায় ২০১২, ২০১৪ এবং ২০২২ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেড় কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন কথিত অধ্যক্ষ নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন। এর আগে ২০১৯ সালে আদালত অধ্যক্ষ পদের সিল ব্যবহার করার কারণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নূরে আলম সিদ্দিকী মিলনের অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ অবৈধ, ভুয়া, উল্লেখ করে তৈরিকৃত কাগজ বাতিল ঘোষণা করেন। এরপর  নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন যশোর জেলা জজ আদালতে পিটিশন দায়ের করেন। কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ আহম্মদ আলী বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত ১১/১১/২০১৯ তারিখে আহম্মদ আলীর দায়ের করা ৩২১১/১৯ নম্বর পিটিশনে  নূরে আলম সিদ্দিকী মিলনের এমপিওভুক্ত না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক অবৈধ পন্থায় নিজেকে অধ্যক্ষ পদে এমপিওভুক্ত করেন।

এরপর আহম্মদ আলী আদালতের নির্দেশনা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন দিলে শিক্ষা অধিদপ্তর ৯/৭/২০২০ তারিখে আদালতে আদেশ অনুযায়ী ইছালী মডেল কলেজের অধ্যক্ষসহ ২৭/১০/২০০৯ তারিখ থেকে পরবর্তী নিয়োগকৃত সকল শিক্ষকের এমপিওভুক্তি বা বেতন ছাড়করণ করা যাবে না লিখিত পত্রের মাধ্যমে নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশও অমান্য করে তিনি শিক্ষকদের এমপিও ছাড় করেন।

এর আগে ২০০৪ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় বিধি মোতাবেক বিষয়ভিত্তিক একজন করে প্রভাষক নিয়োগের কথা উল্লেখ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয় ¯œাতকোত্তরে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়। ১২/১১/২০০৪ তারিখে দৈনিক গ্রামের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বাংলা প্রভাষক পদে  রমসী আরা খাতুনসহ অনেকে আবেদন করেন। এরপর ২২/১২/২০০৪ তারিখে যশোর সরকারি সিটি কলেজে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় রসমি আরা খাতুন প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২৭/১২/২০০৪ তারিখে সভাপতি নিয়োগ পত্রের ভিত্তিতে ২৮/১২/২০০৪ তারিখ সকাল ৯ টায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন তার স্নাতকোত্তরে তৃতীয় শ্রেণি থাকা সত্তে¡ও সে সময়ও বিধি বহির্ভূতভাবে বাংলায় দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ নেন।

ফহ্এবরপর নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন ২৯/১২/২০০৪ তারিখ সকাল ১০ টায় অবৈধভাবে যোগদান করেন। কিন্ত হঠাৎ করে ২৭/৬/২০০৮ সালে রমসী আরা খাতুনের যোগদান ৩০/১২/২০০৪ তারিখ সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে দেখানো হয়। বিষয়টি রসমী আরা খাতুন কলেজের তৎকালীন সভাপতিসহ এলাকাবাসীকে অবহিত করেন। পরে বিষয়টি মিটিংয়ের মাধ্যমে সুরাহা করা হয়। নূরে আলম সিদ্দিকী বাংলা প্রভাষক পদে প্রথম নিয়োগের বিষয়টি অবৈধ হওয়ায় ১৩/৯/২০০৮ তারিখে কলেজ কমিটি রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে নিয়োগ বাতিল করেন। ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হওয়া সত্তে¡ও তার শিক্ষক নিবন্ধন নেই। এরপর রসমী আরা খাতুন অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া নূরে আলম সিদ্দিকী মিলনের যোগদানের বিষয় নিয়ে ২০১০ সালে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত নিয়োগ বাতিল করেন। এরপর দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে রমসী আরা খাতুনকে মারধর করেন।

অধ্যক্ষ নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন বাংলা প্রভাষক পদে প্রথম নিয়োগ পাওয়া রসমী আরা খাতুনের স্বামী একই কলেজের শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন। নোটিশের সদুত্তর দেওয়া সত্তে¡ও এখনো পর্যন্ত তাকে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

তবে নূরে আলম সিদ্দিকী মিলন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘মাস্টার্সে তৃতীয় শ্রেণি থাকলে নিয়োগ বোর্ড হয় না। সুপ্রিম কোর্ট আমার বেতন ছাড় করার আদেশ দিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে রসমী আরা খাতুন বিভিন্ন সময় ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে বেড়ান।’