যশোরে তিনটি হত্যা মামলার রায়ে ২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ২ জনের যাবজ্জীবন

0

 

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ তিনটি হত্যা মামলার রায়ে  রোববার ২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ  এবং ২ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের  আদেশ দিয়েছেন যশোরের আলাদা আদালতের বিচারক। এর মধ্যে চৌগাছায় পিতা-মাতাকে হত্যার দায়ে পুত্রকে ও বাঘারপাড়ায় ভাবিকে হত্যার দায়ে দেবরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ২৫ বছর আগে অভয়নগরের একটি হত্যা মামলায় দুই জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
একটি মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে পিতা মহির উদ্দিনের কাছে ২ হাজার টাকা চান ছেলে মিলন উদ্দিন। মহির উদ্দিন টাকা নেই বলে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে মিলন উদ্দিন ঘরের ভেতর থেকে গাছিদা বের করে এনে তার পিতাকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন। তখন মহির উদ্দিনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আয়না ছুটে এসে স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা চালালে মিলন উদ্দিন গাছিদা দিয়ে তাকেও কোপান। এতে মহির উদ্দিন ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আয়না ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় তাদের আরেক ছেলে হুমায়ুন কবির চৌগাছা থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চৌগাছা থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) এস এম এনামুল হক আসামি মিলন উদ্দিনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। এরপর মামলার তদন্ত শেষে পিতা-মাতাকে হত্যার ঘটনায় আসামি মিলন উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তিনি।
ওই মামলায় আসামি মিলন উদ্দিনের বিরুদ্ধে পিতা-মাতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অতিরিক্ত দায়রা জজ সপ্তম আদালতের বিচারক জুয়েল অধিকারী মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি মিলন উদ্দিন কারাগারে আটক রয়েছেন বলে আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অপর মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল বাঘারপাড়া উপজেলার পান্তাপাড়া গ্রামের জুলফিকার আলীর স্ত্রী জিনিয়া ইয়াসমিন তুলি ঘরের ভেতর মোবাইল ফোনে স্বামীর সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় তার দেবর বিমান বাহিনীর সাবেক কর্পোরাল প্রভোস্ট মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ঘরের ভেতর ঢুকে জিনিয়া ইয়াসমিন তুলিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। এসময় জিনিয়া ইয়াসমিন তুলির চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ও তার মা ফরিদা বেগম বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর প্রতিবেশীরা জিনিয়া ইয়াসমিন তুলিকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাকে সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে মারা যান দুই সন্তানের জননী জিনিয়া ইয়াসমিন তুলি। এ ঘটনায় নিহতের পিতা ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বাঘারপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত শেষে থানা পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম দেবর মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, শাশুড়ি ফরিদা বেগম ও স্বামী জুলফিকার আলীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, জিনিয়া ইয়াসমিন তুলির স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মো. আসাদুজ্জামান জানান, ওই মামলায় আসামি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪ আদালতের বিচারক সুরাইয়া সাহাব তাকে মৃত্যুদ-াদেশ এবং ১ লাখ টাকা অর্থদ-ের আদেশ দেন। এছাড়া মামলার অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাসের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন পলাতক রয়েছে।
এদিকে অভয়নগরের হত্যা মামলা সূত্রে জানা যায়, ২৭ বছর আগে উপজেলার ধোপাদী গ্রামের নুর মোহাম্মদ দপ্তরীর ছেলে কাওসার আলী দপ্তরী নওয়াপাড়া বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলস সিবিএ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নওয়াপাড়া বাজারে কাওসার আলী দপ্তরী এবং তার দুই ভাই সোহরাব দপ্তরী ও আফসার দপ্তরীসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় শহিদ মেম্বারের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় একদল সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেখানে এসে কাওসার আলী দপ্তরীকে ঘিরে ফেলেন। এরপর তারা গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে কাওসার আলী দপ্তরীকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সোহরাব দপ্তরী ৮ জনকে আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন, খুলনার ফুলতলা উপজেলার যুগ্নীপাশার কানা বাবু ওরফে বাবু, যশোরের অভয়নগর উপজেলার মহাকালের মাকসুদ, রাজঘাটের শান্ত, শংকরপাশার আব্দুর রশিদ, নওয়াপাড়ার নুর ইসলাম, বুইকরা গ্রামের রনি, নওয়াপাড়ার আব্দুর রশিদ ও আতিয়ার রহমান। এরপর মামলার তদন্ত শেষে যুগ্নীপাশার কানা বাবু, শংকরপাশার আব্দুর রশিদ, মহকালের মাকসুদ ও নওয়াপাড়ার নুর ইসলামকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এছাড়া চার্জশিটে অপর ৪ আসামির অব্যহতির আবেদন জানানো হয়।
আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাড. সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা জানান, ওই মামলায় আসামি কানা বাবু ও মাকসুদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- এবং ২০ হাজার টাকা করে অর্থদ- অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।