পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের ভোগান্তির শেষ নেই

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ সামান্য দমকা হাওয়া কিংবা বৃষ্টি হলেই উধাও হয়ে যায় যশোরের পল্লী বিদ্যুৎ । এ যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দিন দিন যেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকের এমন ভোগান্তি বেড়েই চলেছে । যে কোনো সময়ে সামান্য দমকা হাওয়া অথবা বৃষ্টির পানি আকাশ থেকে পড়লেই স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গ্রাহকদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতির কারণেই তারা এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
যশোরের দুটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত কয়েকটি অঞ্চলের গ্রাহকদের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানান, অধিকাংশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তারের ওপর দিয়ে কিংবা দুই পাশ দিয়ে গাছপালা রয়েছে। এমনকী অনেক স্থানে বাশের ঝাঁড়ের মধ্য দিয়েও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন গেছে। নির্দিষ্ট সময় পর পর সঞ্চালন লাইনের দুই পাশের গাছপালা কাটার নিয়ম থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগ সেই কাজটি করে না। আবার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ছেড়া কাটা তার যত্রতত্র ভাবে জোড়া লাগানো। এমনকী অনেক বৈদ্যুতিক পোলের সঞ্চালন লাইনের তার ঝুলে আছে। অধিকাংশ সঞ্চালন লাইনের পোলে টানা দেওয়া নেই । যে কারণে দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়া ছাড়াই সামান্য বাতাসে গাছের ডালপালা দোল খেয়ে সঞ্চালন লাইনের তারের সাথে লেগে ফায়ারিং হয়। আবার একটু ঝড়ো হাওয়ায় বৈদ্যুতিক পোল হেলে যায়। সঞ্চালন লাইনের তার ছিড়ে যায়। সামান্য দমকা হাওয়া কিংবা বৃষ্টিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকে বিদ্যুৎ বিভাগ। সেই আশঙ্কা থেকেই তারা আকাশে মেঘ জমলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে। আবার একটু ঝড়ো হাওয়ায় কোনো না কোনো অঞ্চলে গাছপালা ভেঙে গিয়ে সঞ্চালন লাইনের তার কিংবা পোলের ওপর পড়ে। আকাশে সামান্য মেঘ জমলেই এবং হালকা মাঝারি ঝড় বৃষ্টি শুরু হলেই যশোরের দুটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা আতঙ্কে থাকেন-এই বুঝি বিদ্যুৎ উধাও হয়ে গেল।
এবিষয় মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন রিপন বলেন, একটু বাতাস হলে সেই রাতে আর বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতবিহীন রাতে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি মাছের ঘের নিয়ে। যেহেতু মাছের ঘেরে দিন রাত ২৪ ঘন্টায় নির্দিষ্ট সময় পর পর অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুতচালিত এয়ারেটর মেশিন চালু রাখতে হয়। তা না হলে যে কোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার পর ঝড় না হলেও বৃষ্টি এবং আকাশে চমকানোর কারণে সারা রাত বিদ্যুতবিহীন ছিলাম। শুক্রবার দিনের বেলায়ও আমার বাড়ি ও মৎস্য ঘেরে বিদ্যুৎ সরবারহ ছিল না। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
শার্শা উপজেলার রাড়ি কায়বা ইউনিয়নের বাসিন্দা মশিয়ার রহমান বলেন, মূলত বিদ্যুৎ বিভাগের বড় ধরনের উদাসীনতা আছে। তারা নিয়মিত সঞ্চালন লাইনগুলো চেক করে পাশের ঝুঁকিপূর্ণ গাছের ডালপালাগুলো ছাটাই করলে আমরা এমন ভোগান্তির শিকার হতাম না।
ঝিকরগাছার উজ্জলপুর গ্রামের আবুল হাশেম বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কাজের গাফিলতির ফল ভোগ করতে হয় আমার মত গ্রাহকদের । তারা সময়মতো কাজ করবে না, আবার সময়মতো বিল পরিশোধ করেও বিদ্যুতবিহীন থাকবো এটা হতে পারে না। তাই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আগেই বিদ্যুৎ বিভাগ যদি সঞ্চালন লাইনের পাশের গাছপালা কেটে দেয় তাহলে আমরা গ্রাহকরা এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবো।
এ বিষয় যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ইছাহাক আলী বলেন, গ্রাহকদের এই জাতীয় কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে বড় ধরনের ঝড় হলে সাময়িক কিছু সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। যেমন গত মাসের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বেশ কিছু সমস্যা হয়েছিল। সেই সমস্যা কাভার করতে তিন দিন মত সময় লেগেছিল। যে কারণে ওই সময়টাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তাছাড়া সামান্য ঝড় হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে গ্রাহকদের এমন অভিযোগ অবান্তর।
একই বিষয় যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল লতিফ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছু সময় বন্ধ রাখি। অনেক সময় সামান্য ঝড়ো হাওয়ার কারণে বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ে। সাধারণত এই সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে লাইন চেক করি তারপর পুনরায় চালু করি। আবার অনেক সময় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের লাইনের কোথাও ফল্ট হয়, সে কারণেও অনেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। স্বাভাবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে আমার নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখার চেষ্টা করি।