অন্ধকারে যশোরের ৬ লাখ মানুষ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় রিমালে যশোরাঞ্চলে বড় ধরনের প্রভাব না পড়লেও এ এলাকার প্রায় সাড়ে ৬ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যাওয়া, খুটি উপড়ে পড়াসহ সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হতে হয়েছে বলে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১ ও ২ এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর বাইরে ঝড়ে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষি বিভাগ বলছে, ঝড়ের তীব্রতায় উপকূল এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি থাকলেও যশোরে এর তীব্রতা সেই তুলনায় অনেক কম ছিলো। যে কারণে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের যে পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার আশংকা ছিলো তা হয়নি।
তবে যশোর শহর ১২ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার পর সোমবার বিকেল তিনটায় শতভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় বলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-(ওজোপাডিকো) ১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। তবে বিদ্যুৎবিহীন গ্রামাঞ্চলে এখন ভুতুড়ে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জান াগেছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পৃথক ৪ টি শাখার আওতায় প্রায় ১৩ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে ৫ লাখ ৫০ হাজার, ২ এর অধীনে ৬ লাখ ২২ হাজার, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বিক্রয় বিতরণ শাখা-১ এর অধীনে ৫০ হাজার ও একই বিভাগের বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-২এর অধীনে ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। উল্লিখিত সংখ্যক গ্রাহক রোববার রাত ১২ টার পর থেকে বিদ্যুৎবিহীন ছিলেন। এরমধ্যে সোমবার দুপুর দুইটার দিকে ওজোপাডিকোর অধীনে ৭০ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় এবং পরে বিকেল ৩ টার মধ্যে শতভাগ সংযোগ দেয়া সম্ভব হয় বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।
ওজোপাডিকো বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশরী নাসির উদ্দীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে যে ক্ষতির আশঙ্কা করছিলাম আল্লাহর রহমতে সেই পরিমাণ ক্ষতি হয়নি। তারপরও কিছু এলাকায় তার ও খুটির ক্ষতি হওয়ার কারণে সেগুলো মেরামত করতে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। তবে সেটি এখন পুরোপুরি সচল ।
একই কথা বলেন, ওজোপাডিকো বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মাহমুদ। তিনি বলেন, তার অধীনে ৫০ হাজার গ্রাহককে সোমবার বিকেলের মধ্যে সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়েছে। কয়েকটি ট্রান্সমিটার নষ্ট হওয়া ছাড়া ঝড়ে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক রাতে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. ইছাহাক আলী জানান, ঝড়ে বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়া, তার ছিড়ে পড়ার কারণে তার অধীনে সাড়ে ৫ লাখ গ্রাহক রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এরমধ্যে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ গ্রাহকের সংযোগ দেয়া গেলেও এখনো ২ লাখ মতো গ্রাহককে সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। আশা করা যায় আজকের (সোমবারের) মধ্যে শতভাগ সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।
একই কথা বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মাদ আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে আমাদেরকে আগেভাগেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় তারের ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ২ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা গেলেও এখনো ৪ লাখ গ্রাহকের সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ঝড়ের পর থেকেই বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন দিনরাত কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত সমাধান হবে।
এদিকে ঝড়ের কারণে যশোরের সবজিসহ অন্যান্য ফসলের যে পরিমাণ ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছিলো তা হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ঝড়ে কিছু কিছু এলাকায় বড় গাছের ক্ষতি হয়েছে। তবে এ অঞ্চলের সাড়ে তের হাজার হেক্টর জমিতে যে গ্রীষ্মকালীন সবজি রয়েছে তা অনেকটা অক্ষত রয়েছে। বরং ভারি বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সবজি ক্ষেতের জন্য উপকার হয়েছে। তবে কিছু এলাকার করোলা, লাউ, কাকরোলের মাচা বাতাসে পড়ে গেছে বলে তিনি জানান।