খুলনা যশোর চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপ মরুর উত্তাপ

0

আকরামুজ্জামান ॥ টানা তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে খুলনা,যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা। সোমবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গা যৌথভাবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রবণ এলাকায় পরিণত হলেও মঙ্গলবার সেখানে নতুন করে যোগ হয়েছে খুলনা জেলা। এই তিন জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে।
এর আগের দিন সোমবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় একই সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। গত বুধবার থেকেই খুলনা বিভাগের এই তিন জেলায় তাপমাত্রা ৪০ এর ওপরে ঘোরাফেরা করছে। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ বলেন, সহসা তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, সহসা বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে হাঁসফাঁস মানবজীবন। প্রভাব পড়েছে গবাদি পশুসহ প্রাণিকূলে। বাদ যাচ্ছেনা ফসলের ক্ষেত। গলতে শুরু করেছে সড়কের বিটুমিন।
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা রাস্তায় বের হতে পারছেন না, কাজ করতে পারছেন না। জীবিকার তাগিদে কেউ কেউ বাইরে বের হলেও বেশিক্ষণ শ্রম দিতে পারছেন না। অনেককেই বড় গাছের নিচে, পার্কে বিশ্রাম নিতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তাপপ্রবাহ সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানান তারা।
তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যাদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্করা। যশোর আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঠান্ডাজ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
অতিতীব্র তাপ্রবাহে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের ক্ষেতও। যশোর কৃষি অর্থনীতি প্রধান অঞ্চল। প্রায় সব ধরণের ফসলই এখানে উৎপাদন হয়। তাই যেকোনো বৈরি আবহাওয়া যশোরের কৃষি অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও ক্ষতি করে। তবে, এবার ধানের ক্ষতি একটু কম হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, তাপপ্রবাহ আরও দীর্ঘায়িত হলে সবজি-মাছের আরও বেশি ক্ষতি হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, যশোরের মাঠে এখন যত ধরণের ফসল রয়েছে, তার মধ্যে ৮০ ভাগই ধান। এসব ধানের ৮০ ভাগই পেকে গেছে। কোথাও কোথাও ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে বেশিরভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। তবে কিছু এলাকায় কৃষক কিছুটা দেরিতে ধানের চারা রোপন করেছিলেন। তাদের ধান উঠতে আরও কয়েকদিন লাগবে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে তাদের জমিতে দু’তিনটি সেচ বেশি লাগবে বলে তিনি জানান।
যশোর অঞ্চল সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। বছরে ছয় লাখ মেট্রিক টন সবজি এখানে উৎপাদিত হয়, যা দিয়ে যশোর ও আশপাশের এলাকার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বড় একটি অংশ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। কৃষি এ কর্মকর্তা আরও বলেন, তাপপ্রবাহ আরও দীর্ঘায়িত হলে লতাজাতীয় সবজি ও সবজির চারা নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়বে। পাতা পুড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সন্ধ্যায় এসব ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত কাঁচা ফুলের সিংহভাগই যশোরের গদখালীর চাষিরা উৎপাদন করে থাকেন। যশোর ফুলচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, গরমে সব ধরণের ফুলের পাপড়ি পুড়ে, শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। এর থেকে রেহাই পেতে ঘন ঘন সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে ফুলের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই গরমের কারণে ফুলগাছ নানারকম রোগের প্রাদুর্ভাবও হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা নাজুক অবস্থায় আছেন বলে জানান।
তবে মাছের রেনু ও পোনা উৎপাদনে তীব্র এ গরম ইতিমধ্যেই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জেলার মাছ চাষিরা জানান। প্রখর রোদ ও মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে রেনু ও পোনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে হ্যাচারি মালিকরা জানিয়েছেন।