ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় কাহিল যশোর, দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

0

আকরামুজ্জামান ॥শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে যশোরে। এটি চলতি মৌসুমের দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। আগামী দুই তিন দিন তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তীব্র গরমের কারণে আজ ২১ এপ্রিল থেকে আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
যশোর বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে আবহাওয়া বিভাগের সদর দপ্তর দেশের দক্ষিণের খুলনা বিভাগকে তীব্র তাপপ্রবাহ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ বিভাগের সীমান্ত জেলা চুয়াডাঙ্গায় গত দুদিনে পরপর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। গত ১৫ এপ্রিল থেকে এ জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে ওঠানামা করতে থাকে। তবে সেটি ছাপিয়ে যশোর জেলা এখন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হলেও যশোরে সেটি অতিক্রম করে রেকর্ড হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। অথচ যশোরে সেটি অতিক্রম করে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি। যা তীব্র থেকে তীব্র।
যশোর বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বছর তাপমাত্রার ধরন একেবারে চরমভাবাপন্ন। মুহূর্তের মধ্যে তাপমাত্রার পারদ উর্ধ্বমুখী হচ্ছে। অন্যান্য দিন দুপুর ১২ টার পর থেকে তাপমাত্রা তীব্র হতে চললেও শনিবার মুহূর্তে মুহূর্তে তার রূপ বদলায়। এদিন সকাল ১০ পর থেকেই তাপমাত্রা ৩৯ ছাড়িয়ে যায়। তার এক ঘন্টার ব্যবধানেই সেটি ৪১ ডিগ্রি অতিক্রম করে। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং সর্বশেষ ৩ টার দিকে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। জলবায়ুর বিরূপ প্রবাহের কারণে আবহাওয়ার এ দ্রুত এ পরিবর্তন বলে তিনি জানান।
এদিকে তীব্র এ তাপপ্রবাহের কারণে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগীর সংখ্যা। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঁচ শয্যার বিপরীতে গতকাল ভর্তি ছিল ২৫ রোগী। যার মধ্যে ১১ জনই শিশু। লাগাতার তাপদাহের কারণে রোদের মধ্যে ঘরের বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ।
প্রচ- গরমে নাকাল হয়ে পড়েছেন যশোরে সবশ্রেণি পেশার মানুষ। তবে এরমধ্যে বেশি বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া দরিদ্র অসহায় মানুষ। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে তাদের বাইরে বের হতে হচ্ছে।
শহরের মুজিব সড়কে কথা হয় মফিজুর রহমান নামে এক রিকশাচালক বলেন, অন্যান্য দিন বেলা ১২ টার পর তাপমাত্রা অসহণীয় পর্যায়ে চলে গেলেও আজ (শনিবার) পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সহ্য করা যাচ্ছে না। বাইরে বের হলে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
একই কথা বলেন, মমিন গাজী নামে আরেক রিকশাচালক। তিনি বলেন, শহরে মানুষ নেই বললে চলে, গরমে কেউ বের হতে চাচ্ছে না। যে কারণে আমাদের আয় রোজগারও কমে গেছে। আর গরমের কারণে বেশিক্ষণ রিকশাও চালাতে পারছেন না বলে তিনি জানা।
গরমে মানুষের জীবন যাত্রার প্রভাবের পাশাপাশি কৃষির ওপরও বড় প্রভাব পড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে যশোরের মৎস্যপল্লী হিসেবে খ্যাত চাঁচড়ায় রেণু ও পোনা উৎপাদনের মৌসুম চলছে। এই এলাকার ৪২টি হ্যাচারিতে রেণু ও পোনা উৎপাদন করা হলেও সেখানে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ ফিরোজ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার জানান। তারা জানান গরমের কারণে রেণু ও পোনা উৎপাদনে ধস নেমেছে। প্রচ- তাপমাত্রায় রেণু টিকছে না বলে তারা জানান।
একই পরিস্থিতি বোরো আবাদ ও সবজি ক্ষেতেরও। তীব্র গরমে বোরে ধানে সেচ কাজেও বিঘœ ঘটছে বলে কৃষকরা জানান।