যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা না পেয়ে এক সপ্তাহে দুই রোগীর মৃত্যু

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে দুই রোগীর চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সাপের কামড়ের রোগী ওষুধ থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ না করে রেফার্ড করায় ও অপর এক রোগীকে ওয়ার্ডে ভর্তির চিকিৎসক না আসায় মৃত্যু অভিযোগ উঠেছে। উল্লিখিত দুই ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলে তাদের প্রাপ্্য চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই। ফলে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাপ্য চিকিৎসা না পেয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে এব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছেন, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামে সর্পদংশনে মারা যায় সাকিব হোসেনের (২১) মৃত্যু হয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে সাকিব হোসেন সর্প দংশনে আহত হন। এরপর রাত ৮টার দিকে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সর্প দংশনে রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রতিশেধক ৯০টি “এন্টিভেনম” রয়েছে হাসপাতালে। কিন্তু সাকিব হোসেনকে এন্টিভেমন না দিয়ে ওষুধ নেই বলে তাকে একজন ইন্টার্ণ চিকিৎসক খুলনায় রেফার্ড করেন। খুলনায় নেয়ার সময় পথের মাঝে সাবিক হোসেন মারা যান বলে তার স্বজন মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন। সাকিব এড়েন্দা গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে। স্বজনদের অভিমত দ্রুত “এন্টিভেনম” ইনজেকশন দেয়া হলে সাকিব হোসেন হয়তো বেঁচে যেতে পারতেন। কিন্তু ইনজেকশন না দেয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা তাদের। হাসপাতালে “এন্টিভেনম” থাকা সত্ত্বেও রোগীকে কেন দেয়া হলো না তার সঠিক কোন জবাব মেলেনি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুন-অর-রশীদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, সর্প দংশনে আহত রোগীর চিকিৎসার জন্য ৯০টি এন্টিভেনম আছে হাসপাতালে। কেন দেয়া তা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ওই সময় কে কে দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাছে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক।
এছাড়া চিকিৎসা না পেয়ে গত ১৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে মতিয়ার রহমান (৬৭) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসক মিনহাজুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে গত ১৪ এপ্রিল রাত ১২টা ২৫ মিনিটে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে। হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার কাছে কোন চিকিৎসক আসেননি। একপর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। এ অভিযোগ এনে মৃতের ছেলে বিল্লাল হোসেনের। তিনি এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। মৃতের স্বজনরা জানিয়েছেন, এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি করার পর যথাযথ চিকিৎসা মিলছে না। চিকিৎসার ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ ঘটনা স্বীকার করে বলেছেন, ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত দু’জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ওই দু’চিকিৎসকের নাম জানাতে পারেননি। তবে লিখিত জবাব চেয়েছেন। প্রয়োজনে তাদের মাসিক ভাতা বন্ধ করা ও ইন্টার্নশিপ এক বছর বাতিল করে দিবেন বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুন-অর-রশীদ।