যশোরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৫১ নেতা-কর্মীর ঈদ কাটবে কারাগারে

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ( খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুসহ ৫১জন নেতা-কর্মীর কারাপ্রকষ্টে এবার ঈদ কাটছে। পুলিশের দায়েরকৃত কথিত নাশকতা মামলায় তারা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন। কারাবন্দীদের মধ্যে আছেন জেলা বিএনপির সদস্য মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, জেলা কৃষক দলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম মোস্তাফিজুর রহমান কবির, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকে রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ কর্মসূচি পুলিশি তান্ডবে পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে দলটি শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে। দেশব্যাপী সেই আন্দোলন তুঙ্গে থাকা অবস্থায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সেই এক তরফা প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে দলটি দেশব্যাপী তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। সেই কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ দলীয় নেতা-কর্মীদের নামে মামলা করে। গত ৩১ মার্চ তারা নি¤œআদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ওই দিন আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে প্রেরণ করেন।
কারান্তরীণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগরের শিশু কন্যা মুশফিকা রহমান মারিয়াম জানে না, তার পিতা কোন অপরাধে আজ কারাগারে। ছোট্ট মারিয়াম বলে, বাবা কারগারে তাই এবার আমাদের ঈদের কোন আনন্দ নেই। বাবাকে ছাড়া ঈদ করবো ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রতি ঈদে বাবা আমাকে সাথে নিয়ে ঘুরতে যায়। এবার ঈদে বাবাকে খুব মিস করবো।
নওয়াপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন লাল্টুর ছেলে সোহানুর রহমান শামীম কারাগারে পিতাকে রেখে এবার তাদের ঈদ কেমন কাটবে? একথা বলতেই তিনি কিছুটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। তিনি বলেন, আমার ২৫ বছরের জীবনে এই প্রথম বাবাকে ছাড়া ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে। আমার পিতার কী অপরাধ? অপরাধ শুধু একটাই আমার পিতা সরকারের বিরোধী মতের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার বাবা কারগারে যাবার আগে নিজেরসহ আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য নতুন পাঞ্চাবি কিনেছিলেন। কারাপ্রকষ্টে আমার বাবার ঈদ করবে, আর বাবার দেওয়া নতুন পাঞ্জাবি গায়ে আমি কীভাবে ঈদের মাঠে যাব, একথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ছাত্রদল নেতা বিপ্লব হোসেনের ষাটোর্ধ্ব পিতা কেরামত মোল্লা বলেন, আমার নিরাপরাধ খোকা কারাগারে ঈদ করবে পিতা হয়ে এটাও আমাকে দেখতে হচ্ছে! বাবা হয়ে আমার মনের আকুতিটা আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না। আমাদের কোন ঈদ নেই। আমাদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে।
এ বিষয় জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, দেশ ও মানুষ বাঁচানোর আন্দোলনের সময়ও দলীয় নেতা-কর্মীরা পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। আজ আমাদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের সময়ও তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কারাগারে ঈদ উদয্াপন করবেন। এটা খুবই কষ্টদায়ক। কেবল মাত্র সরকারের বিরোধীমতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে আজ বিএনপি নেতা-কর্মীদের আপনজনের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগটুকু বঞ্চিত করা হচ্ছে।