এম এম কলেজে ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষার্থীর কোনো খোঁজ নেয়নি কর্তৃপক্ষ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কাছে নতজানু যশোর সরকারি এম এম কলেজ প্রশাসন। ছাত্র সংগঠনটির হাতে একের পর এক কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হলেও ভুক্তভোগীরা কোনো প্রতিকার পান না। কলেজ প্রশাসনের কারণে একের পর এক ছাত্রলীগ কলেজে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এমনটি বলছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পরিবার, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে কলেজের ভাস্কর্যের সামনে থেকে কানোয়ার হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে ছাত্র কমনরুমের মধ্যে ফেলে ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল ইসলাম ও এনামুল ইসলামের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর করে। ভুক্তভোগী কানোয়ার হোসেন ছাত্রদল কর্মী। তিনি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার রাতে কলেজ থেকে বার্ষিক শিক্ষা সফরে যাওয়ার কথা ছিল। শিক্ষা সফরের টি-শার্ট নিতেই তিনি ওই দিন কলেজে যান। কলেজ ক্যাম্পাসে যাওয়া মাত্রই রবিউল ইসলাম ও ইনামুল ইসলামের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার প্রত্যক্ষদর্শী কলেজের দুই শিক্ষক হামলাকারীদের হাত থেকে কানোয়ার হোসেনকে রক্ষা না করেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এঘটনায় কলেজ প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দূরে থাক, আহত কানোয়ার হোসেনের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।
সোমবার এই প্রতিবেদকের সাথে কানোয়ার হোসেনের পিতা আব্দার ফারুখ ও মা আছমা বেগমের কথা হয়। এ সময় তারা বলেন, আমার ছেলেকে ছাত্রলীগ ব্যাপক মারধর করেছে। ওদের হাতে মার খাওয়ার জন্য আমরা ছেলেকে কলেজে পাঠাইনি। আমরা আশা করেছিলাম কলেজের শিক্ষকরা তাদের বিচার করবে। কিন্তু তারা কানোয়ারের খোঁজ খবর পর্যন্ত নেইনি।
কনোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে ফিরে এই প্রতিবেদক সরকারি এম এম কলেজে যান। সেখানে কলেজের দক্ষিণ গেটে কথা হয় শিক্ষার্থী আল-আমিন হোসেন ও রাফেজা খাতুনের সাথে। তারা বলেন, ছাত্রলীগের দাপটে কখন না জানি কি হয় ! এই ভয়ে কলেজে আসি না। কেবল ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে এবং বোর্ড পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে কলেজে আসি।
কানোয়ার হোসেনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে গিয়ে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর কামরুন্নাহার ছুটিতে আছেন। তার অন্য সহকর্মীরা পরীক্ষার ডিউতে আছেন। পরে এই প্রতিবেদক কামরুন্নাহারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন।
এ বিষয় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর বলেন, গত ৩০ মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ছাত্রদল কলেজের মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। দোয়া মাহফিল শেসে মুসল্লিদের মাঝে খাবার বিতরণের সময় ছাত্রলীগ ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আহত করে। ছাত্রলীগ এমন সন্ত্রাসী তান্ডব দিনের পর দিন চালিয়ে আসছে। কিন্তু দলকানা কলেজ প্রশাসন এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। পাল্টা হামলাকারীদের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অধ্যক্ষকে দেখা যায়। কলেজের ছাত্রাবাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা থাকে। তাদের দিয়েই ছাত্রলীগ এমন সন্ত্রাসী তান্ডব চালায়। আমরা কলেজ প্রশাসনের কাছে সকল ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্ত চাই। এই জাতীয় ঘটনার যেন কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রায়হান বিশ্বাস বলেন, কলেজ প্রশাসন ছাত্রলীগের কাছে নতজানু। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যে কারণে একের পর এক ছাত্রলীগ কলেজে তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত কলেজ প্রশাসন একটি ঘটনারও তদন্ত করে দোষী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এমন কোন নজির নেই। যে কারণে কলেজে ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ কোনো শিক্ষার্থী কলেজে নিরাপদ নয়।
এবিষয় কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমার সাথে কারও কোনো কথা হয়নি। আমি ছুটিতে ছিলাম, রোববার থেকে অফিস করছি। কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায় কলেজ প্রশাসনের কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের (সাধারণ শিক্ষার্থী) নিরাপত্তা দেওয়ার দায় কলেজ প্রশাসনের থাকবে না তো কার থাকবে?
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তারের দফতরে গিয়ে জানা যায়, তিনি দাপ্তরিক কাজে বাইরে আছেন। পরে তিনি কাজ সেরে দপ্তরে ফিরে এলেও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন সরি ভাই আমি কোনো কথা বলবো না।