যশোরে বৈচিত্র্যময় আবহাওয়া, তাপমাত্রা কমলেও শীত অনুভূত কম

0

আকরামুজ্জামান ॥ চলতি শীত মৌসুমে যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলে বৈচিত্র্যময় আবহাওয়া বিরাজ করছে। কখনও তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগি সেলসিয়াসে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে । আবার কখনও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে ৬ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই করলেও তেমন শীত অনুভূত হচ্ছে না। আবহাওয়ার এমন আচরণে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে এমনটা হলেও শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে যশোরাঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে বিরাজ করছে। এরমধ্যে রোববার যশোরে তাপমাত্রা ছিলো ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর একদিন পর সোমবার সেটির একটু উন্নতি হয়ে রেকর্ড হয় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলেও আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস।
তবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও এ তিন দিনে এ অঞ্চলে শীত অনুভূত তেমন একটা হয়নি। অথচ এর আগে মধ্য জানুয়ারি থেকে এ অঞ্চলে যখন তাপমাত্রা ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয় তখন শীতের তীব্রতায় জনজীবনে নেমে আসে এক ধরনের স্থবিরতা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনেকটা চরমভাবাপন্ন। দ্রুততম তাপমাত্রার বিস্তর ওঠানামা এমন অবস্থা বহুদিন দেখেনি যশোরের মানুষ। অথচ এবার তাই হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হলেও শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়েছে কদিন আগে। আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হচ্ছে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে এ অস্বাভাবিক অবস্থা। তবে স্বস্তির কথা হলো, দু এক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।
এবছর জানুয়ারির শুরু থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে। যা ঋতুর ধারাবাহিকতা বা চরিত্রের সাথে অবিকল মিল বলে অনেকেই মনে করছেন।
আবহাওয়া অফিস বলছে, সাধারণত শীত মৌসুমে দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি ওঠানামা করে। কিন্তু এবার অনেকটা ভিন্ন। মাত্র একদিনের ব্যবধানে গত রোববার তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়। এর আগে ১৪ জানুয়ারি রোববার জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৮। এরপর পরদিন সোমবার সেটি মাত্র ২ দশমিক কমে রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এর পরদিন ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার সেটি অবাক করে এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর একদিন পর ১৫ ডিসেম্বর বুধবার আবার ৪ দশমিক তাপমাত্রা কমে রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদের এ ওঠানামা অনেকটা অস্বাভাবিক বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। তখন শীতও অনুভূত হয় ব্যাপক।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, তাপমাত্রা যাই হোক না কেনো শীত কম অনুভূত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা বলেন, জানুয়ারির শেষ সময়ে এসে তাপমাত্রার পারদ ৭ স্পর্শ করলেও দিনের বেলায় ঘন কুয়াশা কম ও বাতাস না থাকায় ঠা-া কম অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, ইতোমধ্যে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। আকাশে পুরো মেঘ জমার পর আগামী দু একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হয়ে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে।
এদিকে, বেশ কয়েক বছর আগে শীত মৌসুমে বেশিরভাগ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতো হয় সিলেটের শ্রীমঙ্গল অথবা উত্তরবঙ্গের কোনো জেলায়। আবার গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতো মূলত উত্তরবঙ্গের কোনো জেলায়। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। এখন শীত মৌসুমে বেশিরভাগ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে যশোর বা চুয়াডাঙ্গায়।
আবহাওয়া অফিস বলছে, মাসে গড়ে ৭ দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে যশোরে। গ্রীষ্মেও ঠিক একইভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশিদিন রেকর্ড হয় যশোরে। বস্তুত, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আবহাওয়া যে ক্রমশ চরমভাবাপন্ন হয়ে পড়ছে এটি তারই নজির হতে পারে। এটি আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্রমে মরুময় হয়ে ওঠার প্রবণতা কিনা তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সচেতন মহলে।
এ বিষয়ে রোববার যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ও বর্তমান চট্রগ্রাম কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. ছোলজার রহমান বলেন, হিমালয় পর্বত থেকে যে বায়ু প্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে এটি অনেকটা বিগত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি। যেকারণে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও অনুভূত হচ্ছে অসহণীয়। আবার কখনও তাপমাত্রা কম থাকলেও ঠা-া অনুভূত হচ্ছে কম। তিনি বলেন, সাধারণত শীত মৌসুমে হিমালয় থেকে যে বায়ুপ্রবাহ প্রবাহিত হয় তা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলে তার প্রতিফলন ঘটে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ আশপাশের এলাকায়। আর বায়ুপ্রবাহ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তখন তা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তের মধ্যে তাপমাত্রার পারদ অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করতে থাকে। যা গত কয়েক দিন আগে মধ্য জানুয়ারিতে এ অঞ্চলে দেখা গেছে। তখন তাপমাত্রা ১৪-১৫ ডিগ্রি রেকর্ড হলেও শীত অনুভূত হয়েছে তীব্র। এখন জানুয়ারির সময়ে স্বাভাবিক বাযুপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় সেটি দক্ষিণের জেলাগুলোতে আসতে দেরি করায় তাপমাত্রা কম রেকর্ড হলেও ঠা-া অনুভূত হচ্ছে কম।
এদিকে, গত তিনদিনে যশোরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলেও জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, গত শনিবার থেকে যশোরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলেও সেটি অনেকটা রৌদ্রোজ্জল আবহাওয়ার কারণে সহণীয় পর্যায়ে রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রার উন্নতি হবে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। এজন্য এখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও চাচ্ছেন না আর স্কুল বন্ধ থাকুক।