যশোরে সোলায়মান হত্যায় ৫ জনের নামে মামলা, মিলেছে নেপথ্যের নানা তথ্য

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে জেট ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের ম্যানেজার সোলায়মান হোসেন হত্যার ঘটনায় রোববার বিকেলে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেছেন নিহতের স্ত্রী আসমা খাতুন। তবে পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলা সম্পর্কে নানা তথ্য মিলেছে। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং দুই জনকে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার কারণে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী জানান, নিহত সোলায়মান হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন ৫ জনের নাম উল্লেখসহ সন্দেহভাজন আরও একজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই ৫ আসামির মধ্যে দুই জন হলেন, সন্ত্রাসী মেহেদী হাসান ও আরাফাত হোসেন। অপর ৩ জনের পরিচয় জানাতে পারেনি সূত্রটি।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, গত ২৩ জানুয়ারি দুপুরে কোতয়ালি থানা পুলিশের এএসআই টমাস মন্ডল বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪শ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও নগদ ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকাসহ শহিদুল ও শাহিন নামে দুই যুবককে আটক করেন। তাদেরকে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করেন পুলিশের কথিত সোর্স জসিম শিকদার। কিন্তু পরে পুলিশ ১১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার দেখিয়ে আটক শহিদুল ও শাহিনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করে। এছাড়া শহিদুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ হাজার টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়ে বাকি ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেন এএসআই টমাস মন্ডল। শহিদুলের স্ত্রী স্মৃতির কাছে বাকি টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবতীতে জসিম শিকদার সোর্স মানি হিসেবে ২০ হাজার টাকা পান পুলিশের কাছ থেকে। বিষয়টি জানতে পেরে এই টাকার ভাগ নিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় টিবি ক্লিনিকের সামনে জসিম শিকদারের ওপর চড়াও হন সন্ত্রাসী মেহেদী ও আরাফাতসহ অন্যরা। এরই এক পর্যায়ে জসিম শিকদারকে ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন নিরীহ সোলায়মান হোসেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, আটক শহিদুল ও শাহিন দুই জনই মাদক ব্যবসায়ী। তারা মাদক ব্যবসার একটি সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করেন। এছাড়া একই এলাকার সোহাগসহ কয়েকজন মাদকের আরেকটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করে থাকেন। হামলাকারী মেহেদী ও আরাফাত মূলত শহিদুল ও শাহিন সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয় করে সেবন করতেন। যেটা ভালোভাবে নেননি সোহাগ। গত ২৩ জানুয়ারি মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল ও শাহিন আটকের পর মেহেদী ও আরাফাত অন্যত্র থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয় করে টিবি ক্লিনিকের আঙ্গিনার ভেতর বসে সেবন করছিলেন। এ সময় সোহাগ সেখানে গিয়ে তাদের দেখতে পেয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় সোহাগের ওপর ক্ষিপ্ত হন মেহেদী ও আরাফাত। গত ২৬ জানুয়ারি দুপুরে সোহাগতে খুঁজতে টিবি ক্লিনিক এলাকায় যান তারা। এ সময় সেখানে দেখা হয় সোহাগের মামাতো ভাই পুলিশের কথিত সোর্স জসিমের সাথে। তখন জসিম তাদের কয়েকটি চড় থাপ্পর মারেন। এতে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। পরে মেহেদী ও আরাফাত রিকশায় করে ষষ্ঠীতলায় চলে যাওয়ার পর ফের টিবি ক্লিনিকের সামনে আসেন। সেখানে জসিমকে দেখতে পেয়ে তারা তাকে ছুরিকাঘাত করেন। ওই সময় স্থানীয় অন্যান্য লোকজনের সাথে সোলায়মান হোসেনও হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করেন। এক পর্যায়ে ষষ্ঠীতলার কাঁচাবাজার রোডে গিয়ে আরাফাতকে ধরে ফেলেন সোলায়মান। তিনি তাকে ধরে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসী আরাফাত ও মেহেদী সোলায়মানকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর অবস্থায় সোলায়মানকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে পুুলিশের একটি সূত্র জানায়, এএসআই টমাস মন্ডলের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী শহিদুলের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগেরও তদন্ত হচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন।