জাপা’র বহিষ্কার নাটকের মধ্যে কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করে প্রজ্ঞাপন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশে জাতীয় পার্টিতে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই গতকাল রোববার দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে রংপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা এবং চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিরোধীদলের উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এর আগে সংসদে এবার বিরোধী দল কারা হবে তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা ছিল। অপরদিকে  রোববার দিনভর দলটিতে চলেছে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কার নিয়ে উত্তেজনা। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ রোববার চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এর আগে দলটির দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে অব্যাহতি দিয়েছিলো জিএম কাদেরের কমিটি।
রোববার দুপুরে গুলশানের বাসায় রওশন এরশাদ এক মতবিনিময় সভায় নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।
সেই সাথে পরবর্তী জাতীয় সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত তিনি কাজী মো. মামুনুর রশিদকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছেন।
এদিকে, দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “যারা মিটিং করছেন, আমাদেরকে দল থেকে অব্যাহতির কথা বলছেন – তারা দলের কেউ না। তাদের সিদ্ধান্তের কথা আমাদের কানে নেওয়ার কিছু নাই।”
মূলত ২০১৯ সালে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্ব নেন তার ভাই জি এম কাদের । সে সময় থেকেই রওশন এরশাদ ও তার মধ্যকার বিরোধ তীব্র সংকটে রূপ নেয়।
নির্বাচনের আগে থেকেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ চরম রূপ ধারণ করে।
নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২৮৭টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও ২২০টি আসনেই পরে প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
২৬টি আসনে সমঝোতা হলেও মাত্র ১১টি আসনে দলটি জিততে পেরেছে। প্রার্থীদের ৯০ শতাংশেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
ফলে নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অযোগ্যতাকে চিহ্নিত করে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেওয়া হয় সে সময়।যার ধারাবাহিকতায় দলটির দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুনীল শুভ রায়কে বহিষ্কার করে চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কমিটি। এছাড়া কেন্দ্রীয় আরো কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি।
এরপর আবার ২৫ জানুয়ারি, দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর কমিটি যাদের বহিষ্কার করেছেন, তারা গণ-পদত্যাগ করেন। ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বহিষ্কৃতদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তরের আটটি থানার ৬৬৮ জন নেতা-কর্মী পদত্যাগের কাগজে স্বাক্ষর করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনেই রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলটিকে আবার সংগঠিত করার ঘোষণা দেয় নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অবর্তমানে এবারই প্রথম দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল দলটি।
এর আগে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে ২৭টি আসনে জয় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জেনারেল এরশাদ প্রাথমিকভাবে অংশ গ্রহণ করতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে হয়েছিল। এরপর সমঝোতার মাধ্যমে ২০১৪ সালে ২৯টি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২২টি আসনে জয়লাভ করে দলটি। সে সময় দলটির নেতাদের অনেকের কথায় সেই সমঝোতা নিয়ে অস্বস্তি চাপা থাকেনি। তখন দলটিকে ঘিরে নানা ধরনের তৎপরতাও দেখা গিয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে।