এই সরকার জনগণের নয়, ভারত চীন-রাশিয়ার: গয়েশ্বর

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, “দেশের স্বাধীনতা এখন প্রায় বিপন্ন। কয়েকটি দেশের সার্টিফিকেট নিয়ে নির্বাচন বৈধতা নেয়ার সুযোগ নেই। এটি জনগণের নয়, চীন-ভারত আর রাশিয়ার সরকার হচ্ছে আওয়ামী লীগ”। “সংবিধান রক্ষার নয়, লুটপাট, দুর্নীতি আর পাচারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ”।
শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এই কর্মসূচি থেকেই সংসদ বাতিলের দাবিতে ৩০ জানুয়ারি আবারো কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। বিএনপির এই কর্মসূচির প্রতিবাদে আগের মতোই পাল্টা শান্তি সমাবেশে করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এসময় ৩০ জানুয়ারি বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের বিরুদ্ধে লাল সবুজ পতাকা নিয়ে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, “ভারত-চীনের সার্টিফিকেট নিয়েও সাত পার্সেন্ট ভোট পায়নি আওয়ামী লীগ”। “এই নির্বাচনে মাত্র সাত শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশের বাকি ৯৩ ভাগ মানুষ বিএনপির পক্ষে। এই সরকার জনগণের নয়, চীন রাশিয়া ভারতের সরকার। তাই এই সরকারকে মানতে বাধ্য নয় জনগণ। পরিষ্কার কথা, দেশের সমস্যা দেশের মানুষই সমাধান করবে। বাংলাদেশের মানুষ যদি স্বীকৃতি না দেয় তবে বিদেশিদের সার্টিফিকেটে লাভ হবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল ও পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আগামী ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সারাদেশের মহানগর, থানা, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভায় আবারো কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সেটি এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে’। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয় বিএনপির এই কর্মসূচি থেকে।
সমাবেশে দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, “আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি সৃষ্টি করেছে, দেশকে বিভাজন করেছে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজাতে মাঠে নেমেছে বিএনপি”। “দেশের সাধারণ মানুষ এই সরকারকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা গায়ের জোরে, পুলিশ দিয়ে, রাষ্ট্রীয় শক্তি দিয়ে যে নির্বাচন করেছে জনগণ তা চায়নি। এজন্য সাধারণ মানুষ নির্বাচন বর্জন করেছে। ক্ষমতার জন্য বিএনপি রাজনীতি করে না দাবি করে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “বিএনপি একদলীয় শাসনের পরিবর্তন চায় একটিমাত্র কারণে, বাংলাদেশের মানুষ কখনো একদলীয় শাসন বরদাস্ত করেনি, করবেও না”।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তি, সংসদ বাতিলের দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় গত সপ্তাহে। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ একসাথে এই কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি উপলক্ষে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মঞ্চ তৈরি করা হয়। এতে অংশ নিতে সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সবার হাতেই ছিল কালো পতাকা। কেউ কেউ দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অংশ নেন সমাবেশে।
দুপুর দুইটায় কর্মসূচির সময় থাকলেও বেলা ১২টা থেকেই প্রধান কার্যালয়ের সামনে মিছিল নিয়ে অনেকেই জড়ো হতে থাকেন। স্লোগান দেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে। দুপুর দুইটায় মোনাজাতের মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচি। দুইটার পরপরই কাকরাইলের নাইটেঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল এলাকা পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিএনপিকর্মী বশিরুল আলম টিটু বলেন, “মামলা-হামলা নির্যাতনের পরও বিএনপি নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মাঠ থেকে এক বিন্দুও সরাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বরং বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণায় সাধারণ মানুষ সাড়া দিয়েছে, এটাই বিএনপির আন্দোলনের সফলতা”।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন বলেন, “বিএনপি কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। ভয়ভীতির পর এতো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে বিএনপি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েনি। নেতাকর্মীদের এই মনোবল আন্দোলনকে বেগবান করবে”।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতেই আমরা অনড় আছি। সেই দাবিকে সামনে নিয়েই আমরা কালো পতাকা মিছিল করছি”। “তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীরা জেল, জুলুম ও নির্যাতন শিকার হচ্ছে। তাদের জেল থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছি। তাদেরকে বের করে আনার মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের নতুন করে আশার সঞ্চার হবে।

এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে  প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “ভারত-চীন ও রাশিয়া আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসায়নি। তারা কেবল বন্ধু রাষ্ট্র। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ”। “বিদেশিদের ভয় দেখায়। ৪১ দশমিক ৮ পার্সেন্ট ভোটারের ভোটে শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচিত হয়েছে। এটা জনগণের সরকার। কোনও বিদেশিদের সরকার নয়”।
বিএনপির কর্মসূচির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তারা কালো পতাকা মিছিল করে। কালো পতাকা মানে কী, শোকের মিছিল। কালো পতাকা ভুয়া। বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ। তারা আর তারেকের ফরমায়েশি কথায় কান দেয় না। খেলা একটা হয়ে গেছে, নির্বাচনের খেলা শেষ। এখন খেলা হবে রাজনীতির”।
আগামী ৩০ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে একই সময় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “আগামী ৩০ জানুয়ারি বিএনপি কালো পতাকা মিছিল ডেকেছে। সেদিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকবেন। সারাদেশে লাল সবুজ পতাকা নিয়ে শান্তি ও গণতন্ত্র মিছিল করা হবে”। ( সূত্র: বিবিসি বাংলা)