মেঘলা আকাশ আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে শীতের প্রকোপে জনদুর্ভোগ

0

 

আকরামুজ্জামান॥ যশোরে তাপমাত্রা বাড়লেও সারা দিনের মেঘলা আকাশ ও দুপুর থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি বাড়িয়ে দেয় শীতের প্রকোপ। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিলো না। বুধবার যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১০ ডিগ্রি সেলসিয়াচের নিচে তাপমাত্রা থাকায় গত দুই দিন জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ থাকলেও তাপমাত্রার উন্নতি হওয়ায় আজ থেকে যথারীতি ক্লাস চলবে বলে জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে।
যশোর বিমান বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস বলছে, রাতে বৃষ্টি বেড়ে শীত আরও বেশি অনুভূত হতে পারে। তবে ঠান্ডা যতই অনুভূত হোক না কেনো বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকবে। এটি ক্রমান্বয়ে বেড়ে আগামী চার-পাঁচদিনের মধ্যে তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
বুধবার তাপমাত্রা বাড়লেও তীব্র শীতে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে যশোরসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন। চলতি মৌসুমে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীত পড়তে শুরু করে এ অঞ্চলে। যা জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই এবার তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এরই মধ্যে দুই দফা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে এ অঞ্চলে। গত সোমবার বিকেল থেকে নতুন করে আরেকটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে। উপর্যুপরি শৈত্যপ্রবাহের কারণে গত সোম ও মঙ্গলার দুই দিনে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে অবস্থান করে। কখনও কখনও তাপমাত্রা নেমে আসছে ৮ ডিগ্রির মধ্যে। সেই সঙ্গে বইছে হিমেল উত্তরে হাওয়া। বেশিরভাগ দিন দেখা মিলছে না সূর্যের। কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারিদিক। সকালের দিকে দৃষ্টিসীমা নেমে আসছে মাত্র কয়েক মিটারের মধ্যে। ফলে তাপমাত্রা যতটুকু, শীত অনুভূত হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। কনকনে ঠান্ডাই মানুষ ঘর থেকে বেরুতে পারছে না মানুষ। দিনরাত শহর-বাজারে জনসমাগম হচ্ছে অনেক কম। গরম পোশাক বাদে অন্য সব ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব।
শীতের কারণে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। যত ঠান্ডাই অনুভূত হোক না কেন, জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন ভোরে তাদের রাস্তায় বেরুত হচ্ছে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা গরম পোশাক গায়ে চাপিয়ে শীত ঠেকাতে পারছে। কিন্তু নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূলদের কষ্টের সীমা নেই। দরিদ্রদের জন্য সরকারিভাবে দেওয়া শীতবস্ত্র এবছর যশোর জেলায় বিতরণ নেই বললে চলে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগে অন্যান্য বছরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও এবছর তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েক দফা শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে দলটির নেতারা জানান। তবে শীতবস্ত্র বিতরণের এসব অনুষ্ঠানে যতগুলো বস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে, ছিন্নমূল মানুষ জড়ো হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
কথা হয় যশোর শহরের দড়াটানা মোড় এলাকায় রিকশা চালক রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, শীতের কারণে গত কয়েকদিন ভাড়া তেমন টানতে পারেনি। আজ বের হয়েই বৃষ্টির কারণে সমস্যায় পড়েছি। এ অবস্থায় যাত্রীরা রিকশায় উঠতে চাচ্ছেন না। তারা ইজিবাইকে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বয়স ৫০-এর ওপরে তাই আর পারছিনা। কিন্তু পেটের টানে বের হতে হচ্ছে।
কথা হয় শহরতলীর জামরুলতলা বাজারে সবজি বিক্রেতা শওকত আলীর সাথে। তিনি বলেন, শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে কম। তাই বেচাকেনাও কম হচ্ছে। যারা বাজারে আসছেন তারা সবজিসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেশি শুনে অল্প কিনে চলে যাচ্ছেন। এতে কম বিক্রি হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে সংকটে পড়ছি।
এদিকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ওপরে ওঠায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন, বুধবার যশোরের তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৮ ছিলো। আজ বৃহস্পতিবারও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ওপরে থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। ফলে শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপাত্র অনুযায়ী আজ থেকে আগের মতো শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। তবে সামনে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসলে সেক্ষেত্রে পুনরায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
যশোর বিমান বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবারও জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির বেশি থাকবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। তাপমাত্রা বাড়লেও শীত অনুভূত হবে বেশি বলে আবহাওয়া অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান।
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও বোরো আবাদ, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের জন্য ঝুঁকি মনে করছেন না জেলা কৃষি বিভাগ। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুষান্ত কুমার তরফদার বলেন, বিদ্যমান তাপমাত্রায় এ অঞ্চলের ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। তাছাড়া সামনে ভারী বৃষ্টিপাতেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে আশা করা যায় আমরা অনেকটা বিপদমুক্ত হয়ে যাচ্ছি।