সংকট কমাতে শার্শায় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে

0

আজিজুল ইসলাম, বাগআঁচড়া (যশোর) ॥ যশোরের শার্শা উপজেলায় পেঁয়াজের সংকট দূর করতে নাসিক-৫৩ ও বারি-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে। উপজেলার রাজনগর গ্রামে নাসিক- ৫৩ জাতের পেঁয়াজের চাষ করা হচ্ছে। এছাড়াও বর্ষাকালে বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের চাষও করা হচ্ছে।
দেশে উৎপাদিত শীতকালীন পেঁয়াজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর হু হু করে বাড়তে থাকে অতিপ্রয়োজনীয় এই মশলা জাতীয় পেঁয়াজের দাম। ফলে ভারত থেকে আমদানি করতে হয় পেঁয়াজ। যাতে বৈদেশিক মুদ্রা গুনতে হয়। তাই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ ভারত থেকে নাসিক-৫৩ ও বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের বীজ এনে দেশে উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ সংকট প্রকট হয়। এজন্য সংকট কমাতে দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের চাষ শুরু হয়েছে । গত সেপ্টেম্বর মাসে চাষিরা বীজতলা তৈরি করে এতে চারা উৎপাদন করে। পরে চারা তুলে জমিতে রোপণ করেছেন। এখন সেই জমি থেকে চাষিরা পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি করছেন ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় নাসিক রেড এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ, সার, আন্তপরিচর্যার নগদ অর্থসহ বালাইনাশক, বীজশোধক, পলিথিন, সুতলিসহ অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৪০০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয় এবং ২৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে। শার্শায় মোট পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৭০০ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফলন হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে কৃষি বিভাগ।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। কৃষকরা বিঘাপ্রতি ফলন পাচ্ছেন ৭০ থেকে ৮০ মণ। লাল রঙের বড় বড় প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। ফলন ভালো হলেও বাজারে অবশ্য পেঁয়াজের দাম এখন কম। তাই চাষিদের একটু মন খারাপ। তারপরও লাভের আশা করছেন চাষিরা।
যশোর শার্শা উপজেলার রাজনগর গ্রামের কৃষক মন্নাফ ২ বিঘা ২ কাঠা জমিতে ভারতীয় পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। ছোটগুলো রেখে সম্প্রতি তিনি জমি থেকে পেঁয়াজ তুলেছেন ৫৮ মণ। আরও পেঁয়াজ উঠবে তাঁর জমি থেকে। কৃষক মুন্নাফ বলেন, ‘বিঘাপ্রতি এই পেঁয়াজ চাষে খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। দাম ভালো থাকলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, এত বড় পেঁয়াজ দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে জমিতে থাকতেই পচন ধরবে। কিন্তু বৃষ্টি হলেও পেঁয়াজ পচেনি, বরং, ফলন ভালো হয়েছে। পাট কিংবা আউশ ধান তোলার পরে জমিটা আগে পতিত পড়ে থাকতো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে বাড়তি আয় হলো। আগামী বছরও এই পেঁয়াজ চাষ করবো।’
শার্শার সুর্বণ খালী এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, শীতকালে তাদের এলাকায় স্থানীয় ‘তাহেরপুরী’ নামে একটি জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। বর্ষাকালে দেশে বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ হয়। কিন্তু এই পেঁয়াজের বীজের খুব সংকট। এ জন্য শার্শায় বর্ষাকালে কোনো পেঁয়াজই চাষ হতো না। এবার নাসিক-৫৩ চাষ শুরু হয়েছে।