বেনাপোল বন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মনগড়া মূল্য নির্ধারণের অভিযোগ

0

বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা ॥ বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা ৭০টি সিনথেটিক ফেব্রিকস’র (থান কাপড়) চালান আটকা পড়ে আছে গত ২৮ দিন ধরে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিসিটিতে সর্বোচ্চ ডিউটি ও মূল্য নির্ধারণ করা থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মনগড়া মূল্য বৃদ্ধি করতে চাইছেন বলে অভিযোগ।
মূল্য বৃদ্ধি করলে আমদানিকারকরা বন্দরে আটকে থাকা পণ্য চালানগুলো খালাশ নিতে চাইছেন না। ফলে সরকারের প্রায় ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হয়ে যাবে। অথচ এজাতীয় পণ্য বৈধ পথে না এসে চোরাইপথে আসছে অহরহ।

ঢাকার থান কাপড় আমদানিকারক আলাউদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম, আইসিটি,সোনামসজিদ ও পাংগাও বন্দরে একই জাতীয় পণ্য রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত মূল্যেই শুল্কায়ন ও খালাশ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ বেনাপোলে মূল্য বাড়ানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে আমদানিকারকদের। পণ্য চালানগুলো রাজস্ব বোর্ডের স্লাব অনুযায়ী কাস্টমস জিনেটিক নাম সিনথিটিক ফেব্রিকস হলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সিনথেটিক ফেব্রিকস এর থানকাপড়গুলো তাদের মনগড়া শ্রেণি বিন্যাস করে মূল্য বৃদ্ধি করতে চায়। যা বাংলাদেশের কোন কাস্টমস হাউসে নেই। মূল্য বৃদ্ধি করলে আমদানিকারকরা মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত ৫/৬ বছর আগেও এ জাতীয় পণ্য সারা বাংলাদেশের কাস্টমস হাউসের সাথে মিল রেখে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে একই শ্রেণি বিন্যাস ও একই মূল্যে পণ্য খালাশ দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার অপর থানকাপড় আমদানিকারক মো. স্বপন জানান, থান কাপড়ের সিনথেটিক ফেব্রিকস ইতঃপূর্বে চোরাইপথে আমদানি হয়ে আসতো। বর্তমানে আমদানিকারকরা বৈধপথে যথাযথ শুল্ক পরিশোধ করে খালাশ নিতে চাইলেও কাস্টমস এর মনগড়া মূল্য বৃদ্ধির কারণে বৈধপথে ব্যবসা ছেড়ে পুনরায় চোরাই পথে আমদানি করবে বলে তারা জানান। ফলে সরকারের শত কোটি টাকার রাজস্ব আয় বন্ধ হয়ে যাবে। থান কাপড়ের ২০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হলে, পণ্যচালান পরীক্ষণের সময় জোর করে ২০ কেজি মাল বেশি উল্লেখ করে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা হচেছ। একজন আমদানিকারক কখনওই ২০ হাজার কেজি পণ্য আমদানি করে ২০ কেজি পণ্য বেশি আনবেন না।

আমদানিকারক আরও বলছেন, সিনথেটিক থানকাপড় আমদানির পর তাতে কোন ডিমারকেশন না থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জোর করে এটিকে ওড়না ফেব্রিকস বলে শ্রেণি বিন্যাস করে মূল্য বাড়াতে চান। যা বিধিসম্মত নয়। সিনথেটিক ফেব্রিকসের কাস্টমস এইচ এস কোড-৫৪০৭.৭২.০০ যা মিনিমাম ভ্যালু ৩ ডলার ও ওড়নার এইচএসকোড ৫৪০৭.৭২.০০। উিউটির কোন তারতম্য নেই। কাস্টমস কর্তপক্ষ থান কাপড়কে ওড়না ফেব্রিকস বলে মূল্য ৪ ডলার করতে চাইছেন,যা বাংলাদেশের কোন কাস্টমস হাউসে নেই। ইদানিং বেনাপোল বন্দর দিয়ে এ জাতীয় পণ্য আমদানি হলেই জোর করে শ্রেণি বিন্যাস ও মূল্য বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ আমদানিকারকদের। ফলে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে এখনও পর্যন্ত ২৮০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
ঢাকার অপর আমদানিকারক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, চলতি মাসের প্রথম থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পলেস্টার/ সিনথেটিক ফেব্রিকসকে প্রতি কেজি ৩.৫ ডলারে শুল্কায়ন করে খালাশ দিচ্ছেন, কিন্ত বেনাপোলের ক্ষেত্রে কেন বৈষম্য করা হচ্ছে।
ডলার সংকটে দেশে পণ্যের এলসি করা যাচ্ছে না, ফলে এসব পণ্য চোরাই পথে আসছে প্রতিনিয়ত। ফলে যারা বৈধ পথে সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করে এসব পণ্য আমদানি করছে তারা বাজারে প্রতিযোগিতায় টিেেক থাকতে পারছেন না।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আবদুল হাকিম জানান, আটকে থাকা পণ্যের বিষয়টি আমরা রাজস্ব বোর্ডকে জানিয়েছি। আমরা অ্যাসেসমেন্ট কমিটির মাধ্যমে বিষসয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। গোপন ইনফরমেশনের ভিওিতে আমরা থান কাপড়ের ১২টি চালান আটকে ছিলাম। গোয়েন্দাসহ আমাদের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পণ্য চালানগুলো ভারতীয় ট্রাক থেকে বন্দরের শেডে আনলোড করা হয়। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে রাজস্ব ফাঁকির কোন অনিয়ম পাওয়া যায়নি। বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের এ ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।