নতুন কারিকুলামে শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে কমছে না কোচিং ও প্রাইভেট নির্ভরতা

0

আকরামুজ্জামান ॥ নতুন কারিকুলামে শিক্ষা ব্যয় বেড়ে গেছে। এ ব্যয় মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাঠদান, পড়ানোর কৌশল কোনো কিছুতেই আস্থা আনতে পারছেনা তারা। এতে অধিকাংশ অভিভাবক সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রাইভেট ও কোচিং শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
তবে শিক্ষা বিভাগ বলছে, বিষয়টি নতুন হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে কঠিন মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনে জনপ্রিয়তা পাবে।
অভিভাবকরা জানান, নতুন কারিকুলাম চালু করার সময় শিক্ষা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল এই পদ্ধতিতে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে নোট-গাইড বা সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন হবে না। এমনকি কোচিং করার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু এখন এর উল্টোটাই হচ্ছে। স্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সন্তÍুষ্ট হতে পারছেন না অভিভাবকরা। যেকারণে অভিভাবকরা অনেকটা হতাশ হয়ে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কোচিংয়ে ভর্তির পাশাপাশি বাসায় একাধিক প্রাইভেট শিক্ষক দিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন। এর বাইরে ক্লাসে প্রতিদিন মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে যে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে সেখানে আর্ট পেপার, মার্কার, সিগন্যেসার পেন, রঙসহ আনুসানিক উপকরণের যোগান দিতে গিয়ে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
এবিষয়ে যশোর জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন কারিকুলামে ইংরেজি ও অংক বিষয়ে অনেক ঘাটতি রয়েছে। আগে যে কারিকুলামে শিশুরা পড়াশোনা করতো, সেখানে অংক বিষয়ে একটি অনুশীলনীতে তিন চারটি উদাহরন থাকতো। চর্চা করার জন্য একাধিক অনুশীলন থাকতো। কিন্তু বর্তমান কারিকুলামে শিশুদের শেখার জন্য এমন কোনো অনুশীলন নেই। একই অবস্থা ইংরেজির ক্ষেত্রে। আগে ইংরেজি বিষয়ে গল্প, কবিতা, নিবন্ধ থাকতো। এসব কবিতা, গল্প, বাসায় পড়ে শিশুরা স্কুলে যেতো। তারা নীতি নৈতিকতাও শিখতো বিভিন্ন নিবন্ধ থেকে। এখন নতুন কারিকুলামে এর ছিটেফোটা নেই। যেকারণে অংক, ইংরেজি ও বাংলার ওপর বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে বাসায় অতিরিক্ত বেতনে আলাদা টিচার দিয়ে শিশুদের শেখানো লাগছে।
প্রায় একই কথা বলেন, যশোর শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা কবিতা আফরোজ। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এখন নেই বললে চলে। যেকারণে আমরা অনেকটা প্রাইভেট শিক্ষার ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছি। নতুন কারিকুলামে যেভাবে বাংলা-ইংরেজি, অংক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী তিনটি বিষয় রপ্ত করতে পারছেনা। যেকারনে আমাদেরকে বাড়তি খরচ করে বাসায় প্রাইভেট টিচার রাখা হচ্ছে। আবার কোচিংয়েও ভর্তি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি নেই। অথচ মূল্যায়নের নামে যে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে সেখানে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকরণ কিনে দিতে হচ্ছে। এতে একজন সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর পেছনে মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।
যশোর জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর মা ফাতেমা খাতুন বলেন, আমার দুই ছেলে ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের উপকরণ কিনে দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপর রয়েছে শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাসের চাপ। তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামে দলগত যে শিক্ষা দেয়া হয় সেটি মূলত দলনেতার ওপর শতভাগ চাপ থাকে। গ্রুপে অন্য যে শিক্ষার্থীরা থাকে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা থাকেনা। দলনেতা ৮/১০ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে অ্যাসাইনমেন্ট লিখে ক্লাস শিক্ষকের কাছে জমা দেয়। এসব কারণেই শিশুদের বাসায় বা কোচিংয়ে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, নতুন কারিকুলাম নতুন বলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে অন্য রকম মনে হচ্ছে। আসলে এখান থেকে অনেক শেখার আছে। এটি সবাই যখন পুরোটা আয়ত্ত্বে আনতে পারবে তখন এ নিয়ে বিতর্ক থাকবেনা। তিনি বলেন, প্রাইভেট টিচার, কোচিং বাণিজ্য রোধ ও বাচ্চাদের ওপর চাপ কমাতে এ পদ্ধতি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, যেকোনো নতুন বিষয়ের ওপর পূর্ণ ধারনা পেতে একটু সময় লাগতেই পারে। অভিভাকরা হয়তো মনে করছে তাদের সন্তানরা পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু তা না, শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বোঝাতে সক্ষম হলে আর কোনো সমস্যা হবেনা। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী মূল্যায়নে আনুসাঙ্গিক শিক্ষা উপকরণ কিনতে অভিভাবকদের ওপর যে বাড়তি চাপ হচ্ছে সেটি ভবিষ্যতে থাকবে বলে মনে হয়না। সরকার এ বিষয়টি নিয়েও ভাবছে।