এতো ভোট দিল কারা !

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যশোরের ৬ আসনের সব কেন্দ্র ছিল ফাঁকা। অতীতের মতো ভোটারদের ভিড় দীর্ঘ লাইন দেখা যায়নি। বহু সাংবাদিক পর্যবেক্ষক টিম এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ এবং ভোটারবিহীন কেন্দ্রের ছবি ও ভিডিও ক্যামেরাবন্দি করেছেন। সরেজমিন ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
ভোটগ্রহণের পর সকাল ৮টা ১৭ মিনিটের সময় যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বাইরে একজন পুলিশ ও দুইজন আনসার সদস্য বসে আছেন। প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে তরিকুল ইসলাম। তিনি জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৫১৩ জন। ১৭ মিনিটে ভোট কাস্ট হয়েছে ২০টি।
যশোর শহরের এমএসটিপি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪২৫১। ১০ টা ১০ মিনিটের সময় গিয়ে দেখা যায় ভোট গ্রহণের সংখ্যা ২১১টি। সরকারি সিটি কলেজের পুরুষ কেন্দ্রে ভোটার ৩৮৪২ জন। ১০টা পর্যন্ত সেখানে ভোট পড়ে ২৭০টি। ঘোপ এমএন খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটার সংখ্যা ৩৪০৮টি। এখানে সকাল ১০ টা পর্যন্ত ভোট প্রদানের সংখ্যা ছিলো ৩৪২টি। মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টায় ২৪৯৪ ভোটারের মধ্যে ২৭০ জন ভোট প্রদান করেন। বকচর মাদরাসা কেন্দ্রে বেলা ১২ টায় ৫৩৪২ ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ৫৩২ জন। শহরের শিলা রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা ২ টার সময় গিয়ে দেখা যায় ৩২৪৫ ভোটের মধ্যে ১০২৭ জন ভোট দিয়েছে। একই সময় শেখহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৩৩৬ টি। কেন্দ্রটিতে ভোট সংখ্যা ২৯৮১। ঘোপ মাহমুদুর রহমান স্কুলের পুরুষ কেন্দ্রে বেলা ১২ টায় ভোট পড়ে ৩৪৫ টি। সেখানে মোট ভোট ২৭৩৫। সেবা সংঘ সরকারি বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্রে ২৮৮৪ ভোটের মধ্যে সংগৃহীত ভোটের সংখ্যা ৩৯৩টি। বিএড কলেজ পুরুষ কেন্দ্রে ৩৪৫৭ ভোটের মধ্যে ৫১১টি ভোট পড়ে। উপশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটার সংখ্যা ১১৮৪টি। সেখানে ১২টা পর্যন্ত ভোট প্রদান করেন ৪২৩ জন।
৮টা ৪০ মিনিটের সময় মণিরামপুর উপজেলার কোদলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার সামসুল আলম জানান, ৪০ মিনিটের ব্যবধানে কেন্দ্রটিতে ৬৫টি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ ওই কেন্দ্রের মধ্যে তখন পুলিশ ও আনসার সদস্য ছাড়া অন্য কেউই ছিলেন না।
৯টা ১১ মিনিটের সময় একই উপজেলার খেদাপাড়া পল্লী মঙ্গল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় দুইজন মহিলা ভোটার কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন। পেছন পেছন আরও দুইজন পুরুষ ভোটার প্রবেশ করছেন। এদের একজন আব্দুল বারী জানান, এই কেন্দ্রে ১ ঘন্টার ব্যবধানে ৫/৭ জন ভোট দিয়েছেন। অথচ প্রিজাইডিং অফিসার অশোক বিশ্বাস জানান ৩০২৬ ভোটারের মধ্যে কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ১২০টি। ৯টা ৪০ মিনিটে মনিরামপুরের দিঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ভোটগ্রহণের বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া যায়। কেন্দ্রটিতে তখনও দুই থেকে তিনজন ভোটার ঘোরাঘুরি করছিলেন। অথচ প্রিজাইডিং অফিসার হারুন চন্দ্র রায় বলেন, ২১১৭ ভোটের মধ্যে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিটের ব্যবধানে ভোট করা গ্রহণ হয়েছে ৩০০ জনের।
১১টা ১৫ মিনিটের সময় উপজেলার মশ্মিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। কেন্দ্রের ভেতর ৭/৮জন নারী-পুরুষের পাশাপাশি র‌্যাব ও পুলিশের একটি দল দাঁড়িয়ে আছে। প্রিজাইডিং অফিসার বাবুল হোসেন জানান, কেন্দ্রটিতে নারী-পুরুষ মিলে মোট ভোটার ৩২৩২ জন। তিন ঘন্টার ব্যবধানে সেখানে ভোট পড়েছে ৩০৯টি। অথচ ওই কেন্দ্রের ভেতর ৫/৭ জন ভোটার দেখা যায়।
বেলা ১২ টার সময় মনিরামপুর নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায় ভোটকেন্দ্র একেবারই ফাঁকা ভোটারশূন্য কেন্দ্রে পুলিশ-আনসার ও ভোটগ্রহণের সাথে জড়িতরা অলস সময় পার করছেন। প্রিজাইডিং অফিসার সাধন কুমার পাল বলেন, ৪ ঘন্টার ব্যবধানে সেখানে ভোট পড়েছে ৫৯০ ভোট। এমন চিত্র ছিল সব কেন্দ্রে। অথচ রাতে জেলা রিটার্নিং অফিস থেকে জানানো হয় যশোর-১ আসনে ৩২ শতাংশ, যশোর-২ আসনে ৩৪ শতাংশ, যশোর-৩ আসনে ২৭ শতাংশ, যশোর-৪ আসনে ৩৩ শতাংশ, যশোর-৫ আসনে ৩০ শতাংশ ও যশোর-৬ আসনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।