যশোরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলছে সাফল্যের তথ্য নেই র‌্যাব-পুলিশের কাছে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হয় গত ৯ ডিসেম্বর। যা শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩-এ। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্র বিক্রেতা ও যারা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে এমন লোকদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয় বিশেষ অভিযানে।
তবে টানা ২৩ দিনের ওই বিশেষ অভিযান শেষ হলেও যশোরে এর তেমন কোনো সফলতা দেখা যায়নি। বিশেষ অভিযানে যশোরাঞ্চল থেকে কী পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হলো বা কতজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে যশোর পুলিশ প্রশাসন সর্বদা সচেতন রয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে কী পরিমাণ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি জেলা পুলিশের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা।
অন্যদিকে র‌্যাব-৬ এর যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মাদ সাকিব হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র‌্যাবের অভিযান সার্বক্ষণিক চলমান আছে। বর্তমানেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তিনি উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও গত তিন মাসে ১৫টিরও অধিক দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে জানান।
অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ অভিযানের নামে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারীরা। এসব সন্ত্রাসী এখন জেলার ৬টি আসনের সরকার দলের মনোনীত ও মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে কাজ করছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত বছরে যশোরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের বোমার মজুদ গড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
তফসিল ঘোষণার পর গত বছরের নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত মাত্র এক সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ৪৬টি বোমা ও ৫ কেজি বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করে। এসময় দুজনকে আটক করা হয়। যশোর শহর ও বেনাপোল এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ৩০টি ককটেল ও একটি পিস্তলসদৃশ এয়ারগান উদ্ধার করে র‌্যাব। এছাড়া বেনাপোল পোর্ট থানার ভবেরবেড় গ্রামের একটি পুকুরের পাশের ঝোপের মধ্য থেকে বালতিভর্তি ২১টি ককটেল উদ্ধার করে র‌্যাব। তবে এর সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি র‌্যাব। গত ১৮ নভেম্বর বেনাপোল পোর্ট থানার বালুন্ডা গ্রামের একটি পুকুরের পাশ থেকে ১৬টি ককটেল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বেনাপোল পোর্ট থানার পুলিশ। ওই দিন ঝিকরগাছার লাউজানি রেলক্রসিংয়ের সামনে থেকে মোটরসাইকেল আরোহী দুজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৫ কেজি বোমা তৈরির উপকরণ।
একই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের ঘোপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলামের বাসভবনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত ১৫টি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। ৩-৪টি মোটরসাইকেলে এসে সন্ত্রাসীরা এই হামলা করে। বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এলাকা। অথচ এখনও পুলিশ বোমা হামলাকারীদের আটক করতে পারেনি। তাদের আটক করলে পুলিশ আরও বোমা ও অস্ত্র উদ্ধার করতে পারত বলে সচেতন মহলের দাবি।
নির্বাচনকে ঘিরে সংঘবদ্ধ চক্রের এসব সন্ত্রাসীর তৎপরতার কথা বললেও এখনো পর্যন্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় সন্ত্রাসীরা পাড়া-মহল্লায় এখন বীরদর্পে চষে বেড়াচ্ছে। ফলে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে।