বিজয়ের মাস

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ আজ ৯ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী বীরদর্পে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজয় কেতন উড়িয়ে ঢাকা দখলের জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে। রণাঙ্গনে চতুর্দিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। এর মাত্র একদিন আগে মিত্র বাহিনী বিমানে হাজার হাজার লিফলেট ছড়িয়ে হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তারা দ্রুত ঢাকা পৌঁছানোর লক্ষ্যে চতুর্দিক থেকে অগ্রসর হতে থাকে। এদিন কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা বলেন, আমরা এখন বড় ধরনের লড়াইয়ের জন্যে প্রস্তুত। ঢাকাকে শত্রুমুক্ত করার সব ধরনের বাধা অতিক্রম করেছি। আমাদের পিটি-৬৭ জলচর ট্যাঙ্কগুলো নদী পেরিয়ে যেতে পারবে। মিত্র বাহিনী দ্রুত ঢাকা পৌঁছানোর লক্ষ্যে চারদিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে। পূর্বে একটি বাহিনী যাচ্ছে আশুগঞ্জ,দাউদকান্দি এবং চাঁদপুর। পশ্চিমে আর একটি বাহিনী পৌঁছেছে মধুমতি নদীর তীরে। আর একটি বাহিনী কুষ্টিয়া মুক্ত করে গোয়ালন্দ ঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। হালুয়াঘাট থেকে এগিয়ে আসা বাহিনীও পৌঁছে গেছে ময়মনসিংহের কাছাকাছি। বাংলাদেশের বিজয় অনিবার্য। জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটা বুঝতে পেরেও পাক শাসকরা তাদের বন্ধুরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে স্বাধীনতা ঠেকাতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাসে ঢুকে কয়েকজন ছাত্রকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ,ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি,জাতীয় কংগ্রেসের সমন্বয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শত্রু মুক্ত এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনের কার্যক্রম শুরু এবং খাদ্য,চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বিকেলে মিত্রবাহিনী জামালপুর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কাছে ৬শ হানাদার বাহিনী ধরা পড়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ পাক হানাদার বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা যদি বাঁচতে চাও ভারতীয় বাহিনীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করো।