রামপালে আলোচিত প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

0

এম, এ সবুর রানা (রামপাল) বাগেরহাট ॥ আলোচিত সেই বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে অবশেষে বাগেরহাটের আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর ওয়ালি উল্লাহ শেখ বাদী হয়ে ৪০৮ ধারায় মামলাটি করেন। তবে সকল প্রকার অভিযোগের বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান। তিনি দাবি করেন, একটি পক্ষ তার সুনাম নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অশালীন আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ৮ অক্টোবর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ওয়ালি উল্লাহ শেখ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রামপাল উপজেলার উজড়কুড় ইউনিয়নের আমেনা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাওলাদার সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগে ফুঁসে উঠেছিলেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি ছিল ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার। প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবিভাবক ও স্থানীয়দের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে গণস্বাক্ষরকৃত লিখিত অভিযোগ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন তারা।
উল্লেখ্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর সোনাতুনিয়া আমেনা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বরাবর বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তর চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বিদ্যুৎসাহী সদস্য মো. মনিরুজ্জামানকে আহবায়ক, অবিভাবক সদস্য হানিফ শেখকে সদস্য ও মহিলা শিক্ষক উম্মে হাবিবাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃত সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ওই প্রতিবেদনে দায়িত্বে থাকাকালীন উঠে আসে নানান অপরাধমূলক কর্মকা-ের তথ্য। ২০১৯- ২০২০ অর্থ বছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান সোনাতুনিয়া এ,কে নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিনি সেই টাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা করেন এবং বাকি দেড় লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৯ সালের ৩০ জুনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি’র তহবিল থেকে প্রদেয় ৮৫ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজেই উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ২০১৮ সালের ৮ আগস্টে ৩৫ হাজার টাকা কমিটি ব্যতীত উত্তোলন করে নিজে আত্মসাৎ করেন। ২০২০ সালের ৭ জুলাই ৫০ হাজার টাকা ও ১০ সেপ্টেম্বর ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ৬৫ হাজার টাকা প্রকল্পের অনুমোদন ও কোনো কাজ না করে সমূদয় টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তহবিল থেকে শহীদ মিনার নির্মানের অজুহাতে ৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে কোনো কাজ না করে আত্মসাৎ করেন। ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর বিদ্যালয়ের তিনজন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী অফিস সহায়ক, নৈশপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী যোগদান করেন। তাদের যোগদানের আগে নিয়োগ কার্ড দেওয়ার সময় ওই তিনজনের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়ে তহবিলে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেন। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের কলামনার ক্যাশ তহবিলে ৩৩ হাজার ২৫৩ টাকা উদ্বৃত্ত থাকলেও ব্যাংক স্টেটমেন্টে টাকা আছে ৫ হাজার ১০২ টাকা মাত্র। বাকি ২৮ হাজার ১৫১ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন।
এছাড়াও শিক্ষক, কর্মচারীগণ, শিক্ষার্থী ও অবিভাবকের সাথে অশোভন আচারণ, কলিগ ও ছাত্রীদের প্রতি অশ্লীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খরচের অজুহাতে প্রতিমাসে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া ও ভুয়া ভাউচার লেখাসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠে আসে চূড়ান্ত ওই প্রতিবেদনে।
শিক্ষক পলাশ কুমার মন্ডল, নাসরিন সুলতানা, তুহিন শেখ, লাকি খাতুন ও অফিস সহকারী কমলেশ চন্দ্র পাল বলেন, বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান প্রতিনিয়তই আমাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন। তার মতের বাইরে কোনো কাজ বা মতামতের কোনো তোয়াক্কাই করতেন না তিনি। শিক্ষার মান ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থের গুরুত্ব ছিল বেশি। আমাদের দাবি বিতর্কিত ওই প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমানের স্থায়ী বহিষ্কার।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল কুদ্দুস বলেন, বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক হাওলাদার সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগটি ইতোমধ্যে আমি শুনানি শেষ করেছি। খুব দ্রুতই সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস. এম ছায়েদুর রহমান বলেন, বিতর্কিত ওই প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগটি আমি পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করনীয় নির্ধারণের জন্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।