বাঘারপাড়ায় আমনের ফলনে বিপর্যয়

0

বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতা॥ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ফলনে বিপর্যস্ত যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার আমন চাষিরা। ফসলের শেষ সময়ে কারেন্ট পোকার আক্রমণে খরচের অর্ধেক ওঠা নিয়েও শঙ্কায় আছেন তারা। জমিতে একাধিকবার কীটনাশক ছিটিয়েও আক্রমণ ঠেকাতে পারেন নি কৃষকরা। পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাঁচা-পাকা ধান কাটতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। বাদ যায়নি কৃষি কর্মকর্তার জমিও।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক নিজের বা বর্গা জিমির কাঁচা-পাকা আমন ধান কাটছেন। আবার অনেকে ধান কেটে জমিতে বিছিয়ে রাখছেন পরে শুকিয়ে গেলে তা বাড়িতে নিচ্ছেন। আবার অনেকে ধান মাড়াইয়ের পর সেগুলো বৈদ্যুতিক পাখায় পরিষ্কার করছেন। যার বেশিরভাগ অংশই চিটা ধান।
দরাজহাট ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আমনচাষি নন্দলাল রায় চলতি বছর দেড় বিঘা (৫২শতাংশে বিঘা) জমিতে হাবুবালাম জাতের ধান চাষ করেছিলেন। আমনের জমি তৈরি থেকে শুরু করে ধান মাড়াই পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। তিনি জানালেন,এ বছর মোট ধান পেয়েছি ১৭ মণ। ধানের শীষে যখন রঙ এসেছে তখনই কারেন্ট পোকা আক্রমণ করেছে। পর পর দুই দিন ওষুধ দিয়েও পোকামুক্ত করতে পারিনি। ধানগাছ ও শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছিলো। অনেকের পরামর্শে কাঁচা ধানই কাটতে বাধ্য হলাম’। একই গ্রামের কৃষক লক্ষীকান্ত মল্লিক নিজের ও বর্গা জমিসহ দুই বিঘার মতো জমিতে হাবুধানের চাষ করেছেন। তিনি বলেন,‘এ বছর বিঘাপ্রতি ১৫মণের বেশি ফলন হচ্ছে না। গত বছর বিঘাপ্রতি ২৫মণ করে পেয়েছিলাম। একই এলাকার বর্গাচাষি সবুজ বিশ্বাস, বিনয় বিশ্বাস ও প্রসেনজিত বিশ্বাস জানালেন, কারেন্টপোকার আক্রমণে ধানগাছের আঁশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন মলনমলা ছাড়া আর পথ নেই। জোন খরচও উঠবে না। এসব চাষি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের কৃষি কর্মকর্তা বিজন বিশ্বাসের জমিতেও এ পোকার আক্রমণ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তার কোনো পরামর্শই কাজে আসেনি।’
দোহাকুলা ইউনিয়নের কৃষক রাকিব হাসান বলেন, ১০কাঠা জমিতে গুটিস্বর্ণা জাতের আমন ধান চাষ করে ৮মণ ধান পেয়েছি। গতবছর পেয়েছিলাম ১৪মণ ধান। উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিযনের খানপুর গ্রামের আব্দুল করিম, জামদিয়া ইউনিয়নের ঘোড়ানাছ গ্রামের মলয় লস্কর ও রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের আব্দুল কাদেরসহ উপজেলার বেশিরভাগ কৃষক কারেন্টপোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার ৭ শ ৫০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৭শ ৮০ হেক্টর জমিতে। আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭৫ হাজার ৭ শ ৪২ মেট্রিকটন। উপজেলায় হাইব্রিড ৬শ ১২ হেক্টর, উফশী ১৫ হাজার ৮ শ ৮৮ হেক্টর ও স্থানীয় মনোহার ও ঢেপো জাতের আমন চাষ হয়েছে ২ শ৮০ হেক্টরে। এর মধ্যে গুটিস্বর্ণা জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৮শ ৯০ হেক্টর, হাবুবালাম ৩ হাজার ৭ শ ৯৫ হেক্টর, বিনা ধান ১৭Ñ ১ হাজার ২ শ ৩২ হেক্টর, ব্রি ধান৮৭Ñ২ হাজার ৪৮ হেক্টর, ব্রি ধান ৫১-১ হাজার ৬শ ২৪ হেক্টর, ১ হাজার ৫ শ ৪৮ হেক্টরে ব্রি ধান ৪৯ ও ৯ শ ৭১ হেক্টরে ব্রি ধান ৭৫ উল্লেখযোগ্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহান আমনের ফলন বিপর্যয়ের বিষয়ে বলেন, বাদামি ঘাস ফড়িং (কৃষকদের ভাষায় কারেন্ট পোকা) পোকার আক্রমণে আমন ধানের ফলন কিছুটা কম হবে। এরজন্যে প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী করেন তিনি।