যশোরে রেণুপোনার বাজারে দুর্দিন

0

আকরামুজ্জামান্। যশোরের রেণুপোনার বাজারে বিদ্যুৎ সংকট ও জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে রেণুপোনার উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনা। বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন হ্যাচারি মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা।
মাছচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, যশোর শহরতলীর চাঁচড়া বাবলাতলা মৎস্য পোনা বাজার থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক ও পিকআপে করে রেণুপোনা চলে যায় দেশের ২১ জেলায়। চৈত্র থেকে মধ্য আষাঢ় পর্যন্ত রেণুপোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম হলেও এবার দীর্ঘ অনাবৃষ্টিতে পোনা বেচাকেনার বাজার তেমন জমে ওঠেনি। গত এক সপ্তাহ ধরে বিরতি দিয়ে মাঝেমধ্যে শ্রাবণের বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা বেচাকেনা শুরু হলেও ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোলসহ সকল জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে।লোডশেডিংয়ের কারণে সেচচালিত পাম্প দিয়ে মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন যানবাহনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ক্ষেত্রেও খরচ হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ।
মঙ্গলবার ভোরে চাঁচড়ার বাবলাতলা পোনা বাজারে গিয়ে দেখা যায় এক করুন অবস্থা। রেণু ও পোনা বিক্রেতারা হাড়ি নিয়ে সারি সারি বসে থাকলেও সেখানে নেই কোনো ক্রেতা। কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ীর দেখা মিললেও তারা মাছের পোনা কিনছেন না।
রবিউল ইসলাম নামে একজন রেণু ও পোনা ব্যবসায়ী বলেন, আমার ৩০ বছরের ব্যবসায়ী জীবনে এমন সংকট কখনও দেখেনি। এমনিতে করোনার কারণে গত দুই বছরে আমরা চরম লোকসানে ছিলাম। এরপর ভরা মৌসুমে প্রত্যাশিত বৃষ্টি না পাওয়া মাছের পোনা ও রেণু বিক্রি শিকেয় ওঠে। শেষ সময়ে সামান্য বৃষ্টি পেয়ে যখন আমরা বেচাকেনা শুরু করেছি তখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং আমাদের পথে বসানোর পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
আরেক মাছ চাষি শরিফুল আলম বলেন, মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদনের সাথে পর্যাপ্ত পানির সম্পর্ক রয়েছে। তবে এবছর সেই পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমাদেরকে সেচ নির্ভর হয়ে পড়তে হয়। এর মাঝে সরকারের সিদ্ধান্তে লোডশেডিং চলে। এ অবস্থায় আমাদেরকে ডিজেল চালিত স্যালো মেশিন দিয়ে হাপায় পানি দিয়ে মাছের পোনাকে নিরাপদে রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। যে কারণে আমরা বাধ্য হয়ে মাছের পোনা ও রেণুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছি।


বাগেরহাট জেলার ঝালকাটি থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী শাহাজান আলী ক্ষোভের সাথে বলেন, মাছ চাষিদের পথে বসানোর জন্যই সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সব কিছুর ওপর প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, আগে যশোর থেকে ছোট পিকআপে করে চট্টগ্রামে মাছের পোনা পাঠাতে খরচ হতো ৩২ হাজার টাকা। অথচ এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। কুমিল্লার ভাড়া ছিলো ২১ হাজার বর্তমান চার হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার। ফেনি বাড়িহাটে পাঠাতে পরিবহন খরচ হতো ২৬ হাজার এখন তা বেড়ে ২৬ হাজার হয়েছে। এভাবে প্রত্যেক রুটেই গাড়ি প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে।
জেলা মৎস্য চাষি ও হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে যশোরের মাছচাষিরা বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছেন। অথচ সারাবছরই তাদেরকে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসতে হচ্ছে। মাছ চাষ কৃষির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকার পরও আমরা অকারণে শিল্পরেটে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসছি। এরপরও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে আমরা বিপর্যস্ত। সর্বশেষ ডিজেল কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সেক্টরের সাথে যুক্ত যারা তারা পথে বসতে চলেছে। তিনি বলেন, সঙ্কট থেকে উত্তরণে এই মুহূর্তে সরকারি প্রণোদনার কোনো বিকল্প নেই। সরকার যদি মাছ চাষিদের সাহায্যে এগিয়ে না আসে তাহলে আগামীতে যশোর জেলায় মাছ চাষিদের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যাবে।